পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: দেশের হাজার হাজার মৃত নাগরিকের সম্পত্তি দখল করে তা ভোগ করছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস! নিজের সাম্রাজ্য গড়তে এসব সম্পদ গোপনে ব্যবহার করছেন তিনি। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বর্ণবাদ ও যৌন কেলেঙ্কারির মতো নানা অভিযোগ ও অনিয়মের কথা বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে। তবে এবারের অভিযোগ ভয়াবহ।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ‘দ্য ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার’ হল একটি বহুল বিতর্কিত সম্পত্তি। এটি সামন্ত যুগের জমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সেখান থেকে প্রতিবছর বিরাট অঙ্কের অর্থ মুনাফা আসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোটি কোটি পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন রাজা চার্লস।
ডাচি অফ ল্যাঙ্কাস্টারের অধীনে ‘বোনা ভ্যাকানশিয়া’ নামে এক ধরনের সম্পত্তি আছে। এসব সম্পত্তি মূলত সেসব মৃত নাগরিকের যারা কোনও আত্মীয় বা স্বজনের নামে কিছু উইল করে যাননি। মালিক মারা যাওয়ায় সেসব সম্পত্তিই এখন গোপনে ভোগ করছেন রাজা চার্লস। গত ১০ বছরে বোনা ভ্যাকানশিয়া থেকে ছয় কোটি পাউন্ডের বেশি মুনাফা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বেশ কিছুদিন ধরে দাবি করা হচ্ছে, বোনা ভ্যাকানশিয়ার অর্থ দান করা হয়েছে দাতব্য সংস্থায়।তবে সেই দাবি সত্য নয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব অর্থের অল্প একটি অংশ দাতব্য সংস্থায় দান করা হচ্ছে। আর বেশিরভাগই গোপনে ব্যয় করা হচ্ছে রাজার অন্যান্য সম্পত্তির সংস্কার ও উন্নয়নে, যা ডাচি অফ ল্যাঙ্কাস্টারের অভ্যন্তরীণ নথিপত্র থেকেও প্রমাণিত হয়েছে। উত্তরাধিকার, রাজকীয় ভূ-সম্পত্তি ও যুবরাজ থাকা অবস্থায় কৌশলী বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন তৃতীয় চার্লস। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী তৃতীয় চার্লস চলতি বছরের ৬ মে রাজা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর কিছুদিন আগেই এপ্রিলের শুরুতে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিতর্কিত’ ভূ-সম্পত্তি থেকে কোটি কোটি পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছে রাজপরিবার।
প্রতিবেদন মতে, প্রয়াত ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তাঁর বড় ছেলে বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস দু’টি বিতর্কিত ভূ-সম্পত্তি থেকে ১০০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি অর্থ গ্রহণ করেছেন। বিতর্কিত ওই দুই ভূ-সম্পত্তি হচ্ছে ‘দ্য ডাচি অফ ল্যাঙ্কাস্টার’ ও ‘দ্য ডাচি অফ কর্নওয়াল’। ডাচিগুলো মূলত রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্যের মতো পরিচালিত হয়। যার অধীনে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কৃষিভূমি, অসংখ্য হোটেল, মধ্যযুগীয় দুর্গ, অফিস, দোকান ও লন্ডনের কিছু বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্পও রয়েছে। গতবছর ওই দুই ভূ-সম্পত্তি থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ১৮ লক্ষ পাউন্ড। আর গত সাত দশকে এখান থেকে রাজপরিবার মোট ১২০ কোটি পাউন্ড অর্থ গ্রহণ করেছে।