পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক : আল্লাহর ঘরে উমরাহ করতে গিয়েছিলেন সস্ত্রীক রাজারহাটের বয়স্ক এক মক্কা যাত্রী। তাঁর নাম শেখ কেরামত আলি।
সেখানে ১৯ নভেম্বর ভোরে কাবা শরীফ তাওয়াফ করতে একজন সঙ্গী নিয়ে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন ওই পবিত্র স্থানে। তাঁর সঙ্গী জানিয়েছেন, তাওয়াফ করার পর তিনি পাশেই একটু বিশ্রাম নিতে বসেন। এরপর তাঁর উমরাহ-সঙ্গী ওই স্থানে শেখ কেরামত আলিকে আর খুঁজে পাননি। তিনি মক্কায় তাঁদের বাসস্থানে ফিরে এসে দেখেন সেখানেও কেয়ামত সাহেব ফিরে আসেননি। তাহলে তিনি গেলেন কোথায়? ‘আল-বায়িত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস’-এর কর্মকর্তা এবং শেখ কেরামত আলির সঙ্গে যাওয়া অন্য উমরাহকারীদের বক্তব্য, তাঁরা শেখ কেরামত আলির খোঁজে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু কোনও সন্ধানই পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল এবং অন্য যেসব স্থানে হারিয়ে যাওয়া কোনও উমরাহকারী আশ্রয় নিতে পারেন, সেখানে এবং পুলিশ-থানাতে খোঁজ নেওয়া হয়। বাংলার এই উমরাহকারীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মক্কার পুলিশও শেখ কেরামত আলিকে খুঁজে বের করার জন্য তৎপর হয় বলে জানাচ্ছেন ‘আল-বায়িত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস’-এর সফরকারী কর্মকর্তারা। বিষয়টি মক্কায় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরও তাঁরা জানিয়েছেন বলে তাঁদের দাবি।
শেষপর্যন্ত ৫ ডিসেম্বর ‘আল-বায়িত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস’-এর মাধ্যমে উমরাহ করতে যাওয়া রাজারহাটের ৪৪ জনের ওই দলটি কলকাতায় ফিরে এসেছে। শুধু আসেননি শেখ কেরামত আলি সাহেব। চোখে অশ্রু নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তাঁর স্ত্রী জোহরা বিবি। করুণাময়ের কাছে তাঁর প্রার্থনা, তাঁর স্বামী আল্লাহর ঘর থেকে অবশ্যই ফিরে আসবেন। সউদি পুলিশও তাঁকে বলেছে, শেখ কেরামত আলির মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, তারা সেই ধরনের কোনও খবর বা মৃত ব্যক্তির সন্ধান পাননি। তাঁর স্বামীকে পাওয়া গেলেই মক্কা পুলিশ তাঁকে ফেরানোর বন্দোবস্ত করবে।
বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি ওই ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল সংস্থার কর্তা আলি শা জানান, ‘দোভাষীর সাহায্যে উমরাহকারী নিরুদ্দেশের খবর সউদি সরকারের একাধিক বিভাগে বারে বারে অবগত করার সত্ত্বেও বাংলার বয়স্ক উমরাহকারীকে খুঁজে বার করতে পারিনি সউদি প্রশাসন‘। এরই পাশাপাশি নিরুদ্দেশ ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন বিদেশি ওই আধিকারিকরা।
অন্যদিকে, উমরাহ-হজে গিয়ে পরিবারের অভিভাবকের নিখোঁজের খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন রাজারহাটের শেখ পরিবারের সদস্যরা। সউদিতে নিখোঁজ বয়স্ক পিতাকে খুঁজে পেতে এ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রীর দ্বারস্থ হন তাঁরা। কিন্তু তাতেও কোনও সমাধানসূত্র বের হয়নি বলে অভিযোগ নিরুদ্দেশ উমরাহকারীর ছেলে শেখ শফিক আলির। পরিবারের অভিযোগ, দুই দেশের সরকার ও দূতাবাসের তৎপরতার অভাবেই কেরামত আলিকে মক্কা থেকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
একত্রে আল্লাহর ঘরে উমরাহ-হজ করতে গিয়ে স্বামী হারানোর যন্ত্রণায় কাতর জোহরা বিবি। তবুও ঘরে ফিরে হতাশ হচ্ছেন না। তিনি সম্পূর্ণভাবে ভরসা রাখছেন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উপর। ঘরে ফিরেও জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন জোহরা বিবি। তবে তিনি আল্লাহর উপর ভরসা রাখছেন এবং তাঁর স্বামী বেঁচে রয়েছেন বলে বিশ্বাসী তিনি। তাই কেরামত আলিকে পুনরায় ফিরে পেতে প্রতি ওয়াক্তের নামায শেষে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছেন জোহরা বিবি-সহ তাঁর পরিজনেরা।