গাজা, ১৫ মে: নানা দিক থেকে ভেসে আসছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের শক্তিশালী প্রতিরোধের খবর। জানা গেছে, হামাস যোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় ইসরাইলি সেনাদের বেহাল অবস্থা। ইসরাইলের কাছে হামাসের এই হামলা অভাবনীয়। কারণ, ইসরাইলি সেনারা এমন অত্যাধুনিক হামলার কথা কল্পনাও করতে পারেনি। সূত্রের খবর, রাফায় ইসরাইলি সেনা ট্যাঙ্ক ঢুকলেই গোপন স্থান থেকে হামাসের রকেট গিয়ে আঘাত হানছে তাতে। এদিকে গাজার উত্তরে দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে হামাস। জেইতুন আর জাবালিয়া এলাকায় ইসরাইলি সেনাদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা। মঙ্গলবারও গাজার উত্তরে ব্যাপক বন্দুকযুদ্ধ চলেছে। ইসরাইলের স্বাধীনতা দিবসকেও পণ্ড করে দিয়েছে হামাসের যোদ্ধারা। দক্ষিণ ইসরাইলি শহর আশকেলন ও আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে আবারও রকেট হামলা হয়েছে গাজা থেকে। এ সময় বিভিন্ন স্থান ও লোকালয়ে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। এর কিছু আগেই ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সেডরোটে গাজা থেকে উড়ে আসা তিনটি রকেটকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা অকেজো করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ। গাজায় নতুন করে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের দাবিতে ডানপন্থী ইহুদিরা ওই এলাকায় মিছিল করার সময় হামাস হামলাটি চালায়। মঙ্গলবার ইসরাইলের রামাত গানের তেল হাশোমার সামরিক ঘাঁটির গুদামে বড় আগুনের খবরও পাওয়া গেছে। এই ঘাঁটিতে গাজায় অভিযানের জন্য সমর সরঞ্জামের বিশাল মজুদ ছিল। ইসরাইলকে আটকাতে তৎপর রয়েছে হামাসের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী লেবাননে প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহও। লেবানন থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে তেল আবিবকে অস্থির করে রেখেছে লেবানিজ যোদ্ধারা। আইডিএফ বলছে, লেবানন থেকে মাউন্ট হারমন এলাকায় একযোগে প্রায় ১০টি রকেট আঘাত হেনেছে। ইসরাইলের একটি গোয়েন্দা বেলুনও লেবানন সীমান্তে ভূপাতিত করেছে হিজবুল্লাহ। আইডিএফ জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ’র ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বেলুনটি লেবাননে বিধ্বস্ত হয়েছে।
তবে রাফাহর অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক। শহরটিকে অবরুদ্ধ করে চারদিক থেকে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। আক্রমণের ভয়ে রাফাহ শহর থেকে এরইমধ্যে সাড়ে ৪ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে গেছেন। রাফায় খাদ্যের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এরইমধ্যে বাইডেন সরকারের দ্বৈত নীতি বিশ্ববাসীর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাফা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, রাফায় হামলা হলে ইসরাইলকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে। সেই মন্তব্যের দু’দিন পরই ইসরাইলকে আমেরিকার অস্ত্র সহযোগিতার খবর প্রকাশ্যে এল। হোয়াইট হাউজ কংগ্রেসকে জানিয়েছে, ইসরাইলে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র পাঠাতে সম্মত বাইডেন সরকার। নতুন এই প্যাকেজের মধ্যে ট্যাঙ্ক রাউন্ড, মর্টার এবং কৌশলগত সাঁজোয়া যান অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মার্কিন কংগ্রেসের এক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এক্ষেত্রে আইন প্রণেতাদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। গত সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন যে, ইসরাইল যদি রাফায় বড় ধরনের আক্রমণ চালায় তবে তিনি দেশটিতে অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দেবেন। অথচ এক সপ্তাহের ব্যবধানেই পালটি খেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন প্রশাসন বলেছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে আমেরিকার দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের যে অভিযোগ উঠেছে, তা যাচাই করার মতো পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও নেই। এ কারণে, আইন মেনেই মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে, ইসরাইলের এই আশ্বাসকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে আমেরিকা।