মোল্লা জসিমউদ্দিন: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে একশো দিনের প্রকল্পে দুটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলে। এদিন রাজ্যে জব কার্ড দুর্নীতির তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করলো কলকাতা হাইকোর্ট। কেন্দ্রের একজন, রাজ্যের একজন, একাউন্ট জেনারেলের একজন ও সিএজির একজন প্রতিনিধিকে নিয়ে চার সদস্যের কমিটি গঠন হাইকোর্টের। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ কেন্দ্র ও রাজ্যকে যত দ্রুত সম্ভব এই আধিকারিকদের নাম জানাতে হবে। এই কমিটি গোটা রাজ্যে ভুয়ো জব কার্ড নিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন। আগামী বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি এদিন এজলাসে জানিয়েছেন, ‘২০২৩ -২৪ অর্থবর্ষে যাতে নতুন করে কাজ চালু হয় তার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যকে সজাগ থাকতে হবে’। এদিন সওয়াল-জবাব পর্বে খেত মজদুর সংগঠনের আইনজীবী বলেন, ‘আমরা শ্রমিক। আমাদের পারিশ্রমিক নিয়ে কথা। আমরা কাজের আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কাজ পাইনি। কেন্দ্র বা রাজ্য কারা দায়িত্ব নেবে সেটা তারাই ভাবুক। কিন্তু তাদের দায়িত্ব শ্রমিকদের জন্য কাজ ও উপযুক্ত পারিশ্রমিকের ব্যাবস্থা করা’। এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি কী? যতই দুর্নীতি বা যা কিছু থাক। যারা প্রকৃত নিডি তাদের জন্য কী করা হয়েছে? কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হবে?’
এদিন সওয়াল-জবাবে এএসজি বলেন, ‘রাজ্য হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। কেন্দ্র টাকা দেয়। পঞ্চায়েত স্তরে সুপারভাইজার, নোডাল অফিসার নিয়োগ করে রাজ্য জেলাশাসকের নির্দেশে। তারাই এই টাকা বন্টন করে।কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে ইতিমধ্যে। ২.৪৫ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। ৬.৩৫ কোটি এখনও উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে রাজ্য। রাজ্যে রয়েছে ১.৫৫ কোটি জব কার্ড। কিন্তু তার মধ্যে কতগুলো আসল আর কত ভুয়ো সেটা দেখার দায়িত্ব রাজ্যের’। কেন্দ্রের আইনজীবী বলেন, ‘বিপুল দুর্নীতি হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুরুলিয়াতে এই দুর্নীতি পাওয়া গিয়েছে। আদালত যদি সিবিআইকে নির্দেশ দেয় তাহলে সিবিআই তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে পারে। সিবিআই প্রাথমিক ভাবে যে অনুসন্ধান করেছে কয়েকটি জায়গায় সেখানে বিপুল দুর্নীতি চোখে পড়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় এখনও অনুসন্ধান চলছে’।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বলেন, ‘৫৮ জন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়েছিল। সেই টাকা পরে তারা রাজ্যের অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়েছে বলে জানা গেছে’। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘২০২১ এ কেন্দ্রের একটা টিম এসেছিল মালদা এবং পাহাড়ে। তারা সন্তুষ্ট নয় বলে জানায় জব কার্ড নিয়ে। ২০২৩ এ কলকাতায় ১৫ টি টিম আসে। তারা ফিরে যাওয়ার পর রাজ্যের কাছে কিছু তথ্য চেয়ে পাঠায়। রাজ্যের তরফে সেগুলো পাঠানো হয়। তারপরে নতুন আর টাকা দেয়নি কেন্দ্র। একাধিক বার কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে যাতে নতুন করে এই প্রকল্প চালু করা হয়। নথি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে’।
এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে ৩২৭টি বাংলা লেখা চিঠি জমা পড়েছে। যোগ্য ব্যক্তিদের বকেয়া অবশ্যই দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু দুর্নীতিও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সেজন্য ৪ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিচ্ছে আদালত। তার মধ্যে থাকবেন কেন্দ্র ও রাজ্যের ১ জন করে প্রতিনিধি। আর থাকবেন অ্যাকাউন্ট জেনারেল ও CAG-র প্রতিনিধিরা। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রত্যেককে তাদের দফতরের আধিকারিকের নাম সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশে আরও জানিয়েছে, একেবারে নিচুস্তর পর্যন্ত গিয়ে দুর্নীতি চিহ্নিত করবে এই দল। মনে রাখতে হবে, যোগ্য প্রাপকরা আমাদের কাছে আসবেন না। আমাদেরই তাঁদের কাছে যেতে হবে’। এদিনের শুনানিতে কেন্দ্রের আইনজীবী সওয়াল করে বলেন, ‘ভুয়ো জব কার্ড চিহ্নিত করার দায়িত্ব রাজ্যের। রাজ্য সেই দায়িত্ব পালন করেনি। পুরুলিয়া সহ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে’।
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘সিবিআই এই দুর্নীতির তদন্ত করতে তৈরি’। ওদিকে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, ‘১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির তদন্ত করে বেশ কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে প্রাপকদের বকেয়া মেটাতে চায় তারা’। রাজ্য কিভাবে বকেয়া মেটানোর পরিকল্পনা করেছে? তা পরের শুনানিতে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।