পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: বছরের শুরুতেই গাজা থেকে পাঁচ ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহার করে নিল ইসরাইল। তিনটি প্রশিক্ষণ ব্রিগেডের পাশাপাশি ৫৫১ তম এবং ১১৪ তম রিজার্ভ ব্রিগেড প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী । একটি ব্রিডেগে সাধারণত ৩ থেকে ৫ হাজার সেনা থাকে। সে হিসেবে ১৫ থেকে ২৫ হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নিল তেল আবিব। ইসরাইলি অর্থনীতিকে মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতেই এ সেনা প্রত্যাহার করল নেতানিয়াহু সরকার। ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইসরাইলি সেনার দাবি, গাজা উপত্যকার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে জাতীয় লক্ষ্য ব্যাপকভাবে অর্জিত হয়েছে। আর তাই এসব সেনা আর সেখানে মোতায়েন রাখার প্রয়োজন নেই। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক চাপ ও হামাসের প্রতিরোধের কারণেই এ কাজে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। এর আগে ডিসেম্বরে গাজা থেকে সবচেয়ে প্রশিক্ষিত ও দুর্ধর্ষ গোলানি ব্রিগেড প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল ইসরাইল। গাজা থেকে বিপুল সংখ্যক সেনা প্রত্যাহারের এই ঘটনাকে ইসরাইলি বাহিনীর জন্য বড় ধরনের হার হিসেবে দেখা হচ্ছে। বলাই যায়, এই যুদ্ধে ইসরাইলের হারের লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। উত্তর ও মধ্য গাজায় ইহুদি সেনারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়ার যে দাবি করেছে তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। জানা যায়, গাজায় যে ১৭ ব্রিগেড ইসরাইলি সেনা মোতায়েন রয়েছে তাদের মধ্যে উত্তর গাজায় এখনও ৪ ব্রিগেড সেনা যুদ্ধ করছে এবং সেখানকার যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইসরাইলি সেনার কয়েকটি ব্রিগেড একসঙ্গে চেষ্টা করেও মাত্র কয়েক বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট একটি এলাকাও দখল করতে পারেনি। নুসিরাত, মাগাজি কিংবা দেইরাল বালাহ এলাকায় এখনও স্থলপথে সংঘর্ষ শুরু হয়নি। দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস এলাকায় ইসরাইলের ৭টি ব্রিগেড যুদ্ধ করে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তারা উল্লেখযোগ্য কোনও সাফল্য পেয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরাইলি মিডিয়া দাবি করে আসছে যে, শীঘ্রই এই যুদ্ধের তৃতীয় পর্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। তৃতীয় পর্যায়ের যুদ্ধ শুরুর অর্থ মোটেও একথা নয় যে, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধে ইসরাইল বিজয়ী হয়েছে। ইসরাইল মূলত একের পর এক পর্যায়ের কথা বলে এমন ধারণা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে যে, যুদ্ধ তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছে। সম্প্রতি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ‘আরও বহু মাস’ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তার ওই ঘোষণার পরদিন অন্তত ১৫ হাজার সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, ইসরাইলি জনগণকে বোকা বানানো ছাড়া ওই অঙ্গীকারের অন্য অর্থ নেই।
ইতিহাস সাক্ষী যে, গাজায় বারংবার নজিরবিহীন প্রতিরোধের মুখে পড়েছে তেল আবিব। এ অবস্থায় সেনা প্রত্যাহারের ঘটনাকে ইহুদি বাহিনীর জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এই যুদ্ধ ঠিক কবে শেষ হবে তা বলা কঠিন। কোনও কোনও ইসরাইলি মিডিয়া চতুর্থ পর্যায়ের যুদ্ধের কথা বলছে। এই পর্যায়ে গাজা পুরোপুরি ইসরাইলি সেনার নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা যদি হামাসের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পরাজিত করতেই না পারে তাহলে তারা কীভাবে গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে? ‘বারজিলাই মেডিক্যাল সেন্টার’ নামক একটি ইসরাইলি হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা ৭ অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত ৩,৫০০ আহত ইসরাইলি সেনার চিকিৎসা করেছে। এত বেশি সেনা ইসরাইলের ৭৫ বছরের ইতিহাসে কখনও আহত হয়নি। যদিও ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ এই পরিসংখ্যান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। কাজেই গাজায় ইসরাইল পরাজিত হতে চলেছে ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা বিজয়ের দিকে এগোচ্ছে – এটি বলা ছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতিকে অন্য কোনও ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। গাজায় প্রায় তিন মাস ধরে আগ্রাসন চালানোর পরও ইসরাইলের অর্জন শূন্য।