আহমদ হাসান ইমরান: ইসরাইল বনাম ফিলিস্তিনে ছোট্ট ভূখণ্ড গাজার যুদ্ধে একটা কথা প্রমাণ করে দিয়েছে, ‘মহাশক্তিধর রাষ্ট্র’ হিসেবে ইসরাইলের যে শূণ্যগর্ভ হম্বিতম্বি ছিল, তার জানাযা বেরিয়ে গেছে। যায়নবাদী রাষ্ট্রটির আয়রন ডোম, ক্ষেপণাস্ত্র, এফ১৬ বিমানবাহিনী এবং আমেরিকা প্রদত্ত আরও সব গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র কোনও কাজে আসল না। অথচ ইসরাইলের তুলনায় হামাসের অস্ত্রশস্ত্রের জোগান সিন্ধুর মধ্যে বিন্দুর মতো। তাই তারা বিশ্বের সবথেকে বড় সুরক্ষাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যেভাবে ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে, তা সামরিক দিক থেকে এক অনন্য কীর্তি হিসেবে দুনিয়ার ইতিহাসের পরিগণিত হবে।
আর তারা যাদের বন্দি করে নিয়ে গেছে, তাদের মধ্যে বেশকিছু ইসরাইলি সেনা ও রিজার্ভ সেনারা রয়েছে। আর এই হামলায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৩০০ জন হচ্ছে ইসরাইলি সেনা। এই ব্যর্থতা ঢাকতে ইসরাইল বরাবরের মতো এবারও ফেক নিউজ ও প্রোপাগান্ডার সাহায্য নিচ্ছে। পাশ্চাত্য মিডিয়ার অনেকগুলি হচ্ছে যায়নবাদীদের নিয়ন্ত্রণে।
তারা দিনরাত অবিরাম ফেক নিউজ দিয়ে চলেছে। পাশ্চাত্যের বাইরের মিডিয়াগুলিও (যার মধ্যে রয়েছে আমাদের দেশ হিন্দুস্থান ) উগরে চলেছে ইসরাইলের তৈরি ফেক নিউজ ও ভিডিয়ো এবং তাদের সমর্থনে যে যে ‘সংবাদগুলি’ দরকার। যেমন হামাসের হামলার সময় ৪০ জন শিশু বা বেবিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বা ইসরাইলি মেয়েদের রেপ করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ হামাসকে বর্বর, নরপিশাচ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই আমেরিকা, ব্রিটেন ও সর্বোপরি ইসরাইলের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কে বর্বর, কার মধ্যে কোনও মানবিকতা নেই,হলোকাষ্ট থেকেও হাজার গুণ বেশি পৈশাচিকতা কারা প্রদর্শন করল তা কিন্তু সারা পৃথিবী আজ ঘরে বসে টেলিভিশন ও ইউটিউবের কল্যাণে দেখতে পেয়েছে। নৃশংসতা ও বর্বর কাজে কে হিটলার কিংবা অন্য আক্রমণকারী ঘাতকদের ছাড়িয়ে গেছে, তা আজ প্রমাণিত হয়ে গেছে সারা দুনিয়ায়।
ইসরাইল গাজা নামক জনপদকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। হত্যা করেছে ১০,০০০-এরও বেশি শিশু, নারী ও বৃদ্ধকে। আর তাতে তাদের গর্ব ও আন¨ের সীমা নেই। কিন্তু হলে কি হবে! এক মাসের বেশি যুদ্ধেও বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, নিষিদ্ধ ফসফরাস বোমা এবং কামান, ট্যাঙ্ক প্রভৃতি ব্যবহার করেও তারা কিন্তু হামাসের মুজাহিদদের পরাস্ত করতে পারেনি। আর দিন দিন তারা একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ছাড়া সারা পৃথিবীতে জনসমর্থন হারিয়েছে এবং সরকারগুলির নি¨ার কবলে পড়েছে। অনেকে সম্পর্কও ছেদ করেছেন।
শুধু হামাস নয়, ইসরাইলের একই অবস্থা দেখা গিয়েছিল ২০০৬ সালে লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধেও। শক্তিধর ইসরাইল মার্কিন সক্রিয় সমর্থনেও হিজবুল্লাহকে পরাস্ত করতে পারেনি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার করে তারা হিজবুল্লাহর সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হয়। হামাসের মতো হিজবুল্লাহও লড়েছিল মূলত ঈমানি শক্তির উপর নির্ভর করে।
ইসরাইল বলছিল, তারা ধ্বংসকৃত ও অবরুদ্ধ গাজায় স্থল সেনার অভিযান চালাবে। আর হামাসকে শেষ করে দেবে। হয়তো করবে! কিন্তু এখনও তারা গাজার পরিপূর্ণ দখল নিতে পারেনি। দখল নিতে গিয়ে বেদম মার খাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। হামাসের যোদ্ধারা অসম সাহসে সূড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে ধ্বংস করছে ইসরাইলের শক্তিশালী ট্যাঙ্কও।
ইসরাইল প্রচার চালিয়েছিল যে তারা আল-আহলি হাসপাতালে হামলা করেনি। যে নৃশংস হামলায় ৫০০জন রোগী ও বেসামরিক নারী-পুরুষরা শাহদত বরণ করেছে। কিন্তু দেখা গেল, আল-আহলির পর জিওনিস্ট ইসরাইলি সেনা কমপক্ষে আরও ৪টি হাসপাতালে বোমা বর্ষণ করে নিধনযজ্ঞ ঘটিয়েছে। ইসরাইলের দোষর জো বাইডেন কিন্তু পরের অন্য হাসপাতালগুলি সম্পর্কে কোনও ‘রা’ করেননি।
ইসরাইল যে গাজায় পেরে উঠছে না, তা বোঝাই গিয়েছে ইসরাইলের একজন মন্ত্রীর কথায়। ইসরাইলের মন্ত্রী আমিহাই ইলিইয়াহু বলেছেন যে, ইসরাইল গাজার উপর পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে। অর্থাৎ আমেরিকা প্রদত্ত ভয়াবহ সব অস্ত্রে হামাসকে পরাজিত করা যাচ্ছে না। এ কথা মন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন। ইসরাইলি মন্ত্রী আরও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ইসরাইলের হাতে পরমাণু হাতিয়ার রয়েছে। এ কথা অবশ্য সব বিশেষজ্ঞ জানেন। কিন্তু ইসরাইল, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব তা লুকিয়ে রাখতেই পছ¨ করে। মন্ত্রীর কথায় তা কিন্তু প্রকাশ হয়ে পড়ল।
ইসরাইলি পরমাণু বোমায় এদের কারও আপত্তি নেই, আপত্তি শুধু ইরানের পরমাণু কার্যসূচি নিয়ে। আর কতটা নিষ্ঠুর হলে নাগাসাকি, হিরোশিমার পর একটি দেশের মন্ত্রী পরমাণু আক্রমণের কথা বলতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। অবশ্য গাজাকে তারা পরমাণু বোমার হামলার চেয়ে কম কিছু করেনি। গাজা এখন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। অধিবাসীরা মুমুর্ষু। পরমাণু বোমা ফেললে আর নতুন কি হবে! কিন্তু প্রমাণ হয়ে গেছে, হামাসের মুজাহিদরা ইসরাইল ও আমেরিকার যৌথ হামলার মুখেও পরাজয় মানেনি, অবরুদ্ধ অবস্থায় এখনও টিকে রয়েছে।