পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ করোনার সময় বিশ্বজুড়ে নেমেছিল আতঙ্কের ছায়া। কীভাবে এই সংক্রমণ মোকাবিলা করা যায় তা ছিল মূল চ্যালেঞ্জ। তবে এমন অবস্থাতেও সোশ্যাল সাইটে ছড়ানো হয়েছিল ধর্মীয় বিদ্বেষ পোস্ট। বিশ্বের বহু দেশেই কমবেশি বিদ্বেষ পোস্ট নজরে এসেছিল।
বিশ্বজোড়া এই আপত্তিকর পোস্ট নিয়ে সমীক্ষা চালায় খ্যাতনামা মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার। তাদের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালে করোনার সঙ্গে অহেতুক বিদ্বেষকে যুক্ত করে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। সেই বিদ্বেষ প্রচারের শীর্ষে ছিল ভারত।
সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলি থেকে ‘করোনা জিহাদ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে লাগাতার ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছিল। মূলত আক্রমণ করা হয়েছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলিমদের।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা অনুযায়ী বিদ্বেষ ছড়ানোয় ১৯৮টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান এক নম্বরে। উপরের দিকে থাকা বাকি দেশগুলি হল সোমালিয়া, পাকিস্তান, মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, ইজরায়েল ও আফগানিস্তান। ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের উদ্ধৃতি দিয়ে পিউ এই রিপোর্ট সামনে আনে।
দেশে করোনা মহামারী শুরুর গোড়ার দিকেই চলছিল সিএএ -র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। কেবল মুসলিমরা নন, অমুসলিমরাও এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। তাঁরা দেশের বহু জায়গায় শান্তিপূর্ণ ধর্নায় বসেছিলেন।
রাজধানীতে লাগাতার বেশ কয়েকমাস ধরে চলেছিল প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদকে রুখতে না পেরে গেরুয়া শিবিরে লোকজন বিশেষ করে কেন্দ্রীয় শাসক দলের অনেকেই কুৎসা শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ধর্মীয় বিদ্বেষে নিশানা করা হয়েছিল দিল্লির মুসলিমদের জমায়েতকে।
নিজামুদ্দিন মারকাযে তবলিগি ইজতেমাকে করোনা ছড়ানোর জন্য দায়ী করা হয়। মিথ্যা অপ্রচার চলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। কেবল সোশ্যাল সাইট নয়, বহু বিদ্বেষী গোদি মিডিয়া সেদিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে লাগাতার কুৎসা ও অপপ্রচার করেছিল। বলা হয়েছিল ওই জমায়েত থেকেই দেশে করোনা ছড়িয়েছে। যেহেতু শাসক দলের নেতা কর্মীরাও এই অপপ্রচারে সুর মিলিয়েছিল, তাই দিল্লি পুলিশ অহেতুক এই তবলিগ জামাতের লোকেদের ওপর শুরু করেছিল নিগ্রহ। এমন একটি বিপদের দিনে যখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার কথা, তখন কেন্দ্রীয় শাসক দলের অনেকে সোশ্যাল সাইটকে হাতিয়ার করে গোটা দেশের মুসলিমদের অপদস্ত করার চেষ্টা করে।
পিউ তার রিপোর্টে বলেছে পাকিস্তানে, ইরানের হাজারা জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের করোনা সংক্রমণের জন্য নিশানা করা হয়েছিল। শিয়া হাজারা মুসলমানদের বিরুদ্ধেও লাগাতার প্রচার চালানো হয়েছিল। পাকিস্তানের কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী কোভিড-১৯ কে ‘শিয়া ভাইরাস’ বলেও অপমান করেছিল। রিপোর্টে আফগানিস্তানে শিখদের উপর নির্যাতনের বিশদ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।