বিশেষ প্রতিবেদন: বিশ্বব্যাপী অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যু, মৃত সন্তান প্রসব এবং নবজাতকের মৃত্যুহার নিয়ে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসংঘের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাতৃমৃত্যুর ৬০ শতাংশ, মৃত জন্ম এবং নবজাতকের মৃত্যুর ৫১ শতাংশ নিয়ে শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে ভারত। এর জন্য দায়ী করা হয়েছে, বেশি পরিমাণে জন্মের হার, পরিকল্পনা ছাড়াই সন্তানের জন্ম সহ অপুষ্টি। সমীক্ষা অনুযায়ী ১০টি দেশ এই সমস্যায় ভুগছে। তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারতের নাম। ভারত ছাড়াও ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ডেমোক্র্যাটিক রিউপাবলিক, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ ও চিন।
বলা যেতে পারে লক্ষ্যপূরণের চেয়ে ঢের দূরে দাঁড়িয়ে ভারত। লক্ষ্য, প্রসূতি-মৃত্যুর হার বা এমএমআর রাষ্ট্রপুঞ্জ নির্ধারিত সূচকে নামিয়ে আনা। প্রতি এক লক্ষ প্রসবপিছু যত জন প্রসূতির মৃত্যু ঘটে থাকে গর্ভাবস্থা বা প্রসবকালীন নানাবিধ জটিলতার কারণে, সেই অনুপাতকে বলে প্রসূতি-মৃত্যুর হার। এই হার কমানো একান্ত জরুরি। সেই উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রসংঘের সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-র অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রসবকালীন মৃত্যুর হার ধার্য করা হয়েছিল ৭০।
মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী কেপটাউনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাতৃ নবজাতক স্বাস্থ্য সম্মেলনে, ‘হু’, ইউনিসেফ, ইউনিএফপিএ-এর দেওয়া রিপোর্ট অনুসারে ২০২০-২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় মোট ৪৫ লক্ষ মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাতৃমৃত্যু (২.৯ লক্ষ), মৃত প্রসব (১৯ লক্ষ) এবং নবজাতকের মৃত্যু (২৩ লক্ষ)।
সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ২০৩০-এর মধ্যে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ।
আন্তর্জাতিক মাতৃ নবজাতক স্বাস্থ্য সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাতৃত্ব ও নবজাতকের স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ যথেষ্ঠ না হওয়ার কারণে গর্ভবতী মহিলা, মা এবং শিশুর মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী অগ্রগতি আট বছর ধরে থমকে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর নবজাতক, শিশু এবং কিশোর স্বাস্থ্য এবং বার্ধক্য বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ অংশু বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী এই মৃত্যুর অন্যতম কারণ করোনা ভাইরাস। যা সেই সময় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহ করতে ব্যাহত হয়েছে। চিকিৎসকদেরও এই সময় কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। চিকিৎসক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও পরিকল্পনা মাফিক হওয়া উচিত। তাহলে বিশ্বের যে প্রান্তেই মানুষ থাকুক না, সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবে।
সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২০ তে ভারতে ৭৮৮,০০০ মাতৃমৃত্যু, মৃত প্রসব এবং নবজাতকের মৃত্যু মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী মোট ৪৫ লক্ষ মৃত্যু হয়েছে।
দেখা গেছে গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশ্বের উদ্যোগ বিভিন্ন কারণে থমকে গেছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ এর মধ্যে ধরলে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে ২০১০ সালে। তার পর সেই উদ্যোগ অনেকটাই থিতিয়ে পড়েছে।
এর জন্য দায়ী কোভিড মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, জীবনযাত্রায় ব্যয় বৃদ্ধি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ, বিশুদ্ধ পানীয়, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। বিশেষ করে গরিব, নিম্নবিত্ত অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শারীরিক অবস্থার দিকে আরও বেশি করে যত্নশীল হওয়া উচিত, কারণ তারা সাধারণ জীবনযাত্রা থেকে বঞ্চিত। প্রতিবেদনে মাতৃত্বকালীন ও নবজাতকের মৃত্যু এবং মৃতপ্রসবের হার কমানোর ক্ষেত্রে অনেক দেশের চ্যালেঞ্জের কথাও প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।