পুবের কলম প্রতিবেদক: কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সশরীরে এসে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে উদ্বোধন করবেন বাংলায় প্রথম যাত্রা শুরু করা ‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেসের। সবুজ পাতাক নাড়িয়ে ‘বন্দে ভারত’কে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিলেন ঠিকই কিন্তু ভার্চুয়ালি। শুক্রবার হাওড়া স্টেশন থেকে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করার কর্মসূচি ছিল তাঁর। কিন্তু মাতৃ বিয়োগের কারণে সশরীরে হাজির হতে পারেননি তিনি। ফলে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করলেন এই প্রকল্পের। তবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, রাজ্যপাল আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিন গুজরাতের আহমদাবাদ থেকে ভার্চুয়ালি এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণে কেন্দ্রীয় সরকার রেকর্ড বিনিয়োগ করছে। সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনের সূচনা করার পর বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমেই তিনি কলকাতায় আসতে না পারার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন, ক্ষমা চেয়ে নেন বঙ্গবাসীর কাছে। উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ও আমার দেশের মাটি…’ লাইনটিও।
হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে তিনি আরও বলেন, নিউ জলপাইগুড়ি সহ রেল স্টেশনগুলিকে এয়ার পোর্টের ধাঁচে উন্নয়ন করা হচ্ছে। রেকর্ড গতিতে ডবল লাইন ট্রাকে বৈদ্যুতিকরণের কাজ চলছে।
পূর্ব ও পশ্চিমের ফ্রাইট করিডোর দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। ‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেস উদ্বোধনের পাশাপাশি বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বন্দে ভারত ট্রেনের যাত্রা সেই পবিত্র ভূমি থেকে শুরু হচ্ছে যেখানে জন্ম নিয়েছিল ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান।
এই ট্রেনের মাধ্যমে আরও কাছে চলে এল কলকাতা-উত্তরবঙ্গ। সূচনার দিনটি ৩০ ডিসেম্বর করাও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪৩ সালের এই দিনটিতেই আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
জলদূষণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর দূষণ রোধে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ ২৫টি নতুন নিকাশী পরিশোধন পাবে, তার মধ্যে ১১টির কাজ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
এদিন হাওড়া থেকে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ দেশের সপ্তম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস যাত্রা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করেন। হাওড়া স্টেশনের ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। নীল-সাদা এই ট্রেনটি ৫৬৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ৭ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে।
বারসোই, মালদা ও বোলপুর—শুধুমাত্র এই তিনটি স্টেশনে দাঁড়াবে বন্দে ভারত। উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোররাতে মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে দিল্লি থেকে আহমেদাবাদ হয়ে গান্ধিনগরের বাড়িতে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মায়ের মরদেহ নিজে কাঁধে বইলেন। উপস্থিত থাকলেন শ্মশানের দাহকাজেও। এরপর তিনি আহমদাবাদে ফিরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাওড়ায় ‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।