বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা টানাপোড়েন চলছে। বিশেষ করে বিদেশি শক্তির নজরদারিতে নির্বাচন নিয়ে নানা বয়ানবাজি চলছে। আমেরিকা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আমরা বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন চাই।
এই প্রেক্ষিতে দিল্লি কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ সবার সঙ্গে আওয়ামি লিগের বন্ধুত্ব রয়েছে, কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এক সেলফি দিল্লিতে, আরেক সেলফি নিউ ইয়র্কে। এই দুই সেলফিতেই বাজিমাত। কোথায় নিষেধাজ্ঞা, কোথায় ভিসানীতি? তলে তলে সব আপস হয়ে গেছে।’
দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে এসেছিলেন শেখ হাসিনা এবং তাঁর মেয়ে পুতুল। অনেকে ভেবে ছিলেন জো বাইডেন হয়তো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অবাধ নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনার উপর চাপ সৃষ্টি করবেন। কারণ, এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় আধিকারিকরা বলছিলেন, বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। নইলে তাঁরা ভিসা-সহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলিও একই ধরনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল। এর কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের আগের দুটি নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃত ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি এবং দেদার ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে বলে ওয়াকিফহাল মহল বলেছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের বক্তব্য ছিল ‘আমাদের দেশে কিভাবে ভোট হবে, তা আমরা ঠিক করব। বিদেশীদের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।’
তবে বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াত প্রভৃত রাজনৈতিক দলের একটা ভরসা ছিল যে, বিদেশী সরকারগুলির চাপে বাংলাদেশের হয়তো স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে শেখ হাসিনা সরকার বাধ্য হবে। আর সেক্ষেত্রে বিরোধীদের যে জনসমর্থন রয়েছে, তা ভোটবক্সে প্রতিফলিত হবে।
বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলির এই আশায় প্রথম ঠান্ডা পানি ঢেলে দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে নির্বাচনে নজরদারি করতে খুব বেশি পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। অন্যদিকে নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে জো বাইডেন খোসমেজাজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তোলেন, সঙ্গে ছিলেন হাসিনা কন্যাও। আওয়ামি লিগ এই সেলফিকে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তুলে ধরেছে। উপরন্তু শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পর সেখানে উঠেছে জো বাইডেনের সঙ্গে আর এক সেলফি।
আওয়ামি নেতা ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবার পুরোপুরি ফাঁস করে দিলেন বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন কি হতে চলেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছে যে, ‘তলে তলে’ অর্থাৎ কি না গোপনে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা হয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের নির্বাচনে খুব বেশি নাক গলাবেন না। তবে তাঁরা ‘নির্বাচন নিরপেক্ষ হোক’ জাতীয় শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে যাবেন। কিন্তু তা বাংলাদেশের বাস্তব জমিনে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। এছাড়া ওবায়দুল কাদের সাহেব ভারত সম্পর্কেও বলে দিয়েছেন, ‘আমরা আছি, দিল্লিও আছে।’
বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এবং অন্যান্য নেতারা আগেই নয়াদিল্লিতে এসে মোদি সরকার ও বিজেপি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথাও বলেছেন। ওবায়দুল কাদের রাগঢাক না রেখে বলে দিয়েছেন নির্বাচনে বিদেশীচাপ নিয়ে বিরোধীদের আশা করা হবে ভষ্মে ঘি ঢালা মাত্র।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার আমিনবাজারে জেলা আওয়ামি লিগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামি লিগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিল্লিকে দরকার উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আছি, দিল্লিও আছে। দিল্লি আছে, আমরা আছি। শত্রুতা কারও সঙ্গে নেই, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। এই মাস থেকে খেলা শুরু। আগামী মাসে সেমিফাইনাল, জানুয়ারিতে ফাইনাল।
বিএনপি এখন ফাউল করছে। ফাউল করলে হলুদ কার্ড, ফাউল করলে লাল কার্ড। আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি নির্বাচন করবে না। না করুক। তারা এতদিন কোথায় ছিলেন? খালেদা জিয়া বছরের পর বছর জেলে, তার জন্য একটা আন্দোলনও করতে পারলেন না।
বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার ওপর একবারও কি কোনও হামলা হয়েছে? আওয়ামি লিগ তা করে না। হত্যা আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে আওয়ামি লিগ বিশ্বাস করে না। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে হবে। তিনি বলেন, আমরা নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতির পরোয়া করি না। আমরাও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। তাহলে কেন ভিসানীতি, কেন নিষেধাজ্ঞা। কেউ নিষেধাজ্ঞা দেবে না। নিষেধাজ্ঞার হুমকি-ধমকি সব এখন শেষ।