পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: উত্তরাখণ্ডে যেভাবে বিজেপি শাসনকে কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে মুসলিমদের উচ্ছেদের জন্যে পোস্টার লাগানো হয়েছিল, বাড়িওয়ালাদের বাধ্য করা হয়েছিল যাতে মুসলমানদের দোকান বা ঘর ভাড়া না দেওয়া হয়। সেই একই ঘটনার ট্রেলার দেখল জয়পুর। একই বার্তা। মুসলমানদের ঘর ভাড়া দেওয়া যাবে না। বাড়ি বিক্রি করা যাবে না। জয়পুরের নন্দপুরি কলোনির দেওয়ালে পোস্টার সাঁটানো হয়েছিল। সেখানে লেখা হয়েছিল, ‘হিন্দুদের কাছে অনুরোধ, আপনার একজোট থাকুন। সংঘর্ষ করুন। মুসলিম জিহাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হন’।
কিন্তু কোন সাহসে এমন কাজ করছে সেখানকার হিন্দুত্ববাদীরা? এর জাবাবও মিলেছে। সেখানকার বিজেপি কাউন্সিলর এলাকার মানুষজনকে নিজেই বলেছেন, এলাকায় মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এর পর থেকে এলাকায় পোস্টার সাঁটাচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা। ঘরে ঘরে পৌঁছে, হিন্দু বাড়ি মালিকদের বলা হচ্ছে, তারা যেন কোনও মুসলমনকে ঘর বা দোকান ভাড়া না দেয়।
এলাকার কাউন্সিলর অনিতা জৈনর সঙ্গে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই পোস্টার সম্পর্কে তিনি জানেন। এতে তার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। এই ভাবনাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছেন তিনি।
এ তো গেল কাউন্সিলরের কথা। কিন্তু এই ঘটনায় পুলিশের কি ভূমিকা, সেই প্রশ্নও উঠছে। ব্রহ্মপুরি পুলিশ স্টেশনের আধিকারিক, হরি ওম জানিয়েছেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি তারা জানতে পারেন এই পোস্টারের কথা। তড়িঘড়ি সেগুলোকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা কোনও বড় ঘটনা নয়। ৬–৭ টি বাড়িতে এধরণের পোস্টার লাগানো হয়েছিল।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে খোদ পুলিশের পক্ষ থেকে।
ওই এলাকায় যেসব বাড়ির সামনে পোস্টার টাঙানো হয়েছিল, সেখানকারই এক বাড়ির মালিক বলেন, আমরা পোস্টার লাগিয়েছিলাম। তারপর পুলিশকে কেউ খবর দেয়। পুলিশ এসে পোস্টার সরিয়ে দিলে আমরা কোনও প্রতিবাদ করিনি। ওই এলাকার আরও এক ব্যক্তির মতে, সম্প্রতি এলাকার এক হিন্দু বাড়িওয়ালা এক মুসলিমকে ঘর ভাড়া দিয়ে কোথাও গেছিলেন। মুহুর্তে খবর ছড়িয়ে যায়, মুসলিম পরিবারের কাছে বাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে এই ধরণের পোস্টার লাগানো শুরু হয়। এলাকার কিছু পরিবার মিলে এধরণের অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন উঠছে, জয়পুরে কোনও মুসলিমকে বাড়ি ভাড়া দিলে সমস্যা কোথায়? বাড়ি বিক্রিতেই বা সমস্যা কোথায়? সংবিধানে কি জয়পুরে মুসলিমদের বাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে? তাহলে কেন এই অবিচার? সম্প্রতি রাজস্থানে ক্ষমতা পেয়েছে বিজেপি। উত্তরাখণ্ডেও যখন মুসলমান উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে, তখনও সেখানে ক্ষমতায় বিজেপি। তাহলে কি ক্ষমতার অপব্যবহার করে লোসভার আগে সুকৌশলে অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা করছে গেরুয়া দল? এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে।