কৌশিক সালুই ,বীরভূম :- ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হলো স্বামীর। যদিও এ ঘটনায় আরো ৫ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বীরভূমের সিউড়ি আদালতে।
আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন শেখ তুফান। বাড়ি সিউড়ি থানার কানাইপুর গ্রামে। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রি। ২০১৮ সালে তাঁর স্ত্রী নয়না বিবিকে (২০) পুড়িয়ে মেরে ফেলার অপরাধে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেছেন সিউড়ি আদালতের বিচারক। ২০১৬ সালে সিউড়ি শহরে রুটি পাড়ার বাসিন্দা মীর মুকুলের মেয়ে নয়নার সঙ্গে বিয়ে হয় তুফান এর। অভিযোগ বিয়ের পর থেকেই নিয়মিত বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে আসার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিত তুফান। অলস প্রকৃতির তুফান পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও নিয়মিত সে কাজকর্ম করত না। ফলে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। বাধ্য হয়ে মেয়ে বাবার বাড়ির লোকজন নিয়মিত সাহায্য করত। বিয়ের বছর দুয়েক পর একদিন ভোর বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন তেল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাদের এক বছরের শিশুকন্যা ও গুরুতর জখম হন। গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোকজন প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ঘটনার খবর পেয়ে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গিয়ে দেখেন তাদের মেয়ে বেডে শুয়ে আছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। মেয়ের কাছে মৃত্যুকালীন জবান বন্দি’ শোনার পর বাবা মীর মুকুল স্বামী, শশুর, শাশুড়ি, ননদ,পিসি ও পিসেমশাই এর নামে সিউড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ১৮ দিন পর ওই গৃহবধূ সিউড়ি হাসপাতালে মারা যান । বছর তিনেক বিচার পর্ব চলার পর সিউড়ি আদালতের বিচারক স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাবাস এর নির্দেশ দেন এবং বাকিদের বেকসুর খালাস দেন। ওই গৃহবধূর মা কুসুম বিবি বলেন,”অলস প্রকৃতির জামাই কাজকর্ম না করে প্রায় দিন বাড়িতে বসে থাকত এবং মেয়েকে আমাদের কাছে টাকা পয়সা নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিত। এরমধ্যে একদিন ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় গায়ে তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মেরে দিয়েছে”। সিউড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন,” স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় মেরে ফেলার অপরাধে স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাবাস ও পরিবারের আরও পাঁচজনের বেকসুর খালাস নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক”।