দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট: ঘাস ফুলের ছাপ বালাপোষের গায়। যেন বেশি উষ্ণ রাখে তোমায়, আমায়। সত্যি কি তাই? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই ঠিকই। তবে, চার উপনির্বাচনের ফলাফল রেকর্ড মার্জিনে তৃণমূলের জয় বাড়িয়েছে বালাপোষ সহ লেপের জোড়াফুলের ছাপের ওয়ার।
একবার সুকুমার রায় লেখেন, শিমুল তুলো ধুনতে ভাল/ ঠাণ্ডা জলে নাইতে ভালো। শীত জাঁক দিয়ে বসলে, ঠাণ্ডা জল গায়ে লাগানো যায় না। আর সেখানে খুব আরামদায়ক শীতের বালাপোষ।
শীতের শুরুতে রামপুরহাট পুরসভার মাঠে দেখা মেলে ধুনুরিদের। যারা অর্ডার মাফিক শীতের লেপ ও বালাপোষ তৈরি করে থাকে।
শনিবার সেখানেই দেখা মেলে ধুনুরি মহম্মদ তালিবের। তিনি একমনে তৃণমূলের দলীয় প্রতীক জোড়াফুলের ছাপ যুক্ত বালাপোষ তৈরি করছিলেন। জিজ্ঞেস করতে তিনি জানালেন, এক ভদ্র মহিলা দোকান থেকে কিনে এই ওয়ার দিয়ে বালাপোষ বানাতে দিয়েছেন। ফের সহাস্যে বললেন, বেশ ভালোই লাগছে।
আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীকে মিষ্টি তৈরি করতে দেখা গেছে রসুইকরদের। তবে বালাপোষে শাসকদল নিঃসন্দেহে এগিয়ে।
জেলা তৃণমূল শাসকদলের এক নেতা বলেন, জনপ্রিয়তা এর মূল কারণ। তবে ধুনুরির শিমুল তুলো ধুনো আর কদাচিৎ দেখা যায়। কারণ তার দাম প্রায় হাজার দুয়েক। সে তুলনায় বালাপোষ অনেক সস্তা। কারণ, পুরনো সিন্থেটিক কাপড়, হোসিয়ারি কারখানার বাতিল কাপড় যন্ত্রের সাহায্যে পেষাই করা হয়। তা থেকে তৈরি ‘তুলো’ দিয়ে বানানো হয় লেপের আকারে বালাপোষ। যদিও আসল বালাপোষের দাম অনেক।
একসময় মুর্শিদাবাদের একেবারে নিজস্ব এই শিল্পের নাম ছিল সর্বত্র। লম্বা আঁশের কার্পাস তুলোকে বীজ ছাড়িয়ে লাল রঙ্গে চুবিয়ে শুকিয়ে ভরা হত মোলায়েম সিল্ক এবং মখমলের মধ্যিখানে। সুগন্ধের জন্যে দেওয়া হত আঁতর। বালাপোষের বিশেষত্ব হল মাঝে কোন সেলাই থাকবে না। চার পাশের সেলাই ধরে রাখবে তুলোকে। কুলীন বালাপোষের ওজন দেড় পোয়ার বেশি হবে না। এখন অবশ্য তা আর হয় না।
বালাপোষের ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, শীতে কম্বল ও লেপ মুড়ি মায় পশমের চাদর গায়ে শীত যাচ্ছিল না বাংলা, বিহার, ওড়িশা সহ অবিভক্ত বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর। মুর্শিদকুলি খাঁর জামাই ছিলেন সুজাউদ্দিন, যিনি পরবর্তীকালে বাংলার নবাব হয়েছিলেন। তার উপায় বের করলেন সুজাউদ্দিন। অনেক ভাবনাচিন্তার পর সুজাউদ্দিন-এর নির্দেশে খলিফা রমজান শেখ তৈরি করলেন তুলোর হালকা আবরণ। কার্পাস তুলোকে ঢেকে দেওয়া হল সুন্দর সিল্ক কাপড়ে। নাম দেওয়া হল বালাপোষ।