পুবের কলম প্রতিবেদকঃ ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ এই রীতি মেনে তৃণমূলে সাংগঠনিক রদবদল। জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হল রাজ্যের মন্ত্রীদের। একইসঙ্গে সোমবার একটি জেলাকে সাংগঠনিকভাবে আলাদা ভাবে ভাগ করা হল। গত জুন মাসে সাংগঠনিক বৈঠকের পর দলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসে এক ব্যক্তি এক পদ এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দায়িত্বে থাকা নেতা মন্ত্রীদের আগামী দিনে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে সাংগঠনিকভাবে ব্যাপক রদবদল করা হয়। একইসঙ্গে বিভিন্ন জেলার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের সরিয়ে অন্যদের এই দায়িত্বে আনা হয়।
এদিন সাংগঠনিক জেলার যে রূপরেখা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি-সহ একাধিক জেলা পুরনো সাংগঠনিক অবস্থানে থাকলেও, দার্জিলিং জেলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি হল দার্জিলিং পার্বত্য যেখানে থাকছে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং এই তিনটি বিধানসভা। দার্জিলিং সমতল জেলার মধ্যে থাকছে শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া-নক্সালবাড়ি, ফাঁসিদাওয়া এই তিনটি বিধানসভা। মুর্শিদাবাদ জেলাকে আবার দুটি জেলা ভাগ করা হয়েছে। একটা হল জঙ্গিপুর, অন্যটি মুর্শিদাবাদ-বহরমপুর। নদিয়া জেলাকেও দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নদিয়া নর্থ অর্থাৎ কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা, অন্যদিকে থাকছে নদিয়া সাউথ অর্থাৎ রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা। উত্তর ২৪ পরগনাকে চারটি সাংগঠনিক জেলায় বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হল দমদম-ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা, বারাসত সাংগঠনিক জেলা, বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা এবং বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা। দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে দুটি জেলায় বিভক্ত করা হয়েছে সেগুলি হল ডায়মন্ড হারবার- যাদবপুর এবং সুন্দরবন।
একইভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাকে কাঁথি এবং তমলুক সাংগঠনিক জেলায় ভাঙা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভাঙা হয়েছে ঘাটাল এবং মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলায়, বাঁকুড়া জেলা বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার ভাঙা হয়েছে। হুগলি জেলা হুগলি-শ্রীরামপুর ও আরামবাগ সাংগঠনিক জেলায় হয়েছে।
এদিন জেলা সভাপতি হিসাবেও একাধিক মন্ত্রী যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের সরানো হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম নাম উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর বদলে জেলায় চারজন সাংগঠনিক সভাপতি হয়েছেন। এক্ষেত্রে দমদম-ব্যারাকপুরের সভাপতি পার্থ ভৌমিক। বারাসত জেলা সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায়, বসিরহাটের সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, আর বনগাঁয় আলো রানী সরকার। একইভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে। সেক্ষেত্রে সভাপতি হয়েছেন কাঁথির তরুন মাইতি এবং তমলুকের দেবপ্রসাদ মণ্ডল। একইভাবে হাওড়া গ্রামীণ-এর সভাপতি জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী পুলক রায়ের বদলে নয়া সভাপতি হয়েছেন অরুণাভ সেন। হাওড়া সদরে মন্ত্রী অরূপ রায়ের বদলে কল্যাণেন্দু ঘোষ। কলকাতা উত্তরে সভাপতি হিসাবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে নতুন সভাপতি হয়েছেন তাপস রায় এক্ষেত্রে সুদীপবাবু উত্তর কলকাতার চেয়ারম্যান হয়েছেন। একইভাবে লোকসভা নির্বাচনের পর নদিয়া জেলার সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। তাকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনা সামগ্রিক দায়িত্ব সামলানো শুভাশিস চক্রবর্তীকে ডায়মন্ড হারবার-যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব দে্ওয়া হয়েছে। এদিন সংগঠনিক ক্ষমতা বন্টন থেকে বাদ পড়লেন মৌসম বেনজির নুরও। মোটের উপর সভাপতি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত এক ব্যক্তি এক পদ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।