বিশেষ প্রতিবেদনঃ চিন সরকারের কম্পিউটার হ্যাক করে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ তথ্য হাতে পেয়েছে বিবিসি। তাতে চিনের প্রত্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের আটক কেন্দ্রে রেখে দেওয়ার গোপন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নজিরবিহীন তথ্য সামনে এসেছে। উইঘুর মুসলিমদের ওপর অমানবিক নির্যাতন ও গণহত্যার মতো বিষয়গুলিও ফের একবার উঠে এসেছে। নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা এ ধরনের অনেকগুলো নথি থেকে দেখা গেছে, দেশটির সংখ্যালঘু উইঘুর এবং টার্কিশ সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ইসলামি ধর্মবিশ্বাসের কোনও রকম চিহ্ন দেখা গেলে তাদের দীর্ঘ কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার পুলিশ বিভাগের কম্পিউটার সার্ভার হ্যাক করে পাওয়া বিশাল এই তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে, শিনজিয়াংয়ের চূড়ান্ত গোপনীয়তায় ঢাকা পদ্ধতির একেবারে কেন্দ্রে থাকা হাজার হাজার ফোটোগ্রাফ এবং আটক কেন্দ্র থেকে পালানোর চেষ্টা করলেই গুলি করে হত্যার নীতি বিষয়ক নানা সাক্ষ্যপ্রমাণ। ফাঁস হওয়া কিছু কিছু ছবিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে, বন্দিদের মাথায় কালো হুড এবং শরীরে শিকল বেঁধে নতি স্বীকারে বাধ্য করার কৌশল প্রয়োগ করতে। ‘শিনজিয়াং পুলিশ ফাইল’ নামে পরিচিত এইসব নথি বিবিসির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের গোড়ার দিকে। গত কয়েক মাস ধরে এসব নথির সত্যতা যাচাই ও অনুসন্ধান চলেছে। দেখা গেছে, ওই এলাকায় উইঘুর এবং তুর্কি সম্প্রদায়ের মানুষদের ধর্ম ও সংস্কৃতির যে কোনওরকম চিহ্ন দেখলেই তাদের বন্দি করা হয়েছে। উইঘুরদের বন্দি বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। উল্লেখ্য, এমন এক সময়ে এই গোপন তথ্য প্রকাশ পেল যখন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট চিনের শিনজিয়াং সফরে গিয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন। এই বৈঠকটি রাষ্ট্রসংঘ ও উইঘুরদের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্যাচেলেটকে বলেছেন, উইঘুর ইস্যুতে যেন চিনকে কোনও ভাষণ ও জ্ঞান না দেওয়া হয়। জিনপিং বলেন, উইঘুর ইস্যু চিনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। নতুন করে শিনজিয়াংয়ে চিনের কার্যকলাপ ফাঁস হওয়ার পর বিবিসিকে বেজিং জানায়, চিন সরকার সন্ত্রাস দমনের পদক্ষেপ নিয়েছে। উইঘুরদের প্রশিক্ষণ শিবির বা সংশোধন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, কোনও জেলে নয়। কিন্তু চিনের এমন দাবি বিশ্বাস করেনি বিবিসি।