অর্পিতা লাহিড়ীঃ রাশিয়ার, ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। পুতিনের আগ্রাসী মানসিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিউনের দেশগুলি। পশ্চিমা মিডিয়াগুলো কার্যত ভ্লাদিমির পুতিন , রুশ সেনাকে ধুয়ে দিচ্ছে।ভুক্তভোগী ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঝড় বইয়ে দিচ্ছে পশ্চিমারা। অথচ এই দেশগুলোই ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্রে চোখে যেন ঠুলি পরে বসে আছে। জেলেনোস্কির সেনাবাহিনী কে বীরের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। ফলাও করে পশ্চিমা মিডিয়া প্রচার করে চলেছে এই তথাকথিত বীরযোদ্ধাদের বীরত্বের কাহিনী।
ফিলিস্তিনের মানুষ আত্মরক্ষার্থে একটা ঢিল ছুড়লেও তা তাদের কাছে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হয়ে যায়। ইউক্রেন যুদ্ধ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, পশ্চিমারা কতটা ‘হিপোক্রেট’।মনে পড়ে গত বছর আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি সশস্ত্র পুলিশের তাণ্ডব, জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন ও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ঘিরে পশ্চিমা মিডিয়ার খবর এবং এখন রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের খবরের শিরোনাম পড়লেই তাদের দ্বিমুখী নীতি পরিষ্কার হয়ে যাবে মননশীল পাঠকের জন্য।
ভেবে দেখুন তো আজ ফিলিস্তিনিরা নিজভূমে পরবাসী। বছরের পর বছর ধরে নিরীহ-নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের বর্বরোচিত আচরণের খবর পশ্চিমের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই প্রচার হয়। তবে কিছুটা ভিন্নভাবে।তাদের ‘প্রচার স্টাইলে’ আগ্রাসনবাদীর শক্তি প্রয়োগ অনেকটাই আড়াল করে রাখা হয়। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে পশ্চিমা মিডিয়ার খবর ও নেতাদের কথাবার্তায় দখলদারি, গুলি করে হত্যা, গুলিবর্ষণ এবং বোমা হামলার মতো ঘটনাগুলোতে ‘ক্ল্যাশ’ (সংঘর্ষ), ‘কনফ্লিক্ট’ (সংঘাত) ও ‘প্রোপার্টি ডিসপুট’র (সম্পত্তি বিরোধ) মতো শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়।
আসল কারণ হচ্ছে পরোক্ষ ভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর আরও বেশি করে সন্ত্রাসী লেভেল সেঁটে দেওয়া। কেন এই বৈমাত্রেয় সুলভ আচরন?ইজরায়েলের কেন এত দরদ ইউক্রেনের ওপর, একটু পিছনে তাকালে দেখা যাবে ২০২১ সালে অবরুদ্ধ গাজায় অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণে, ইজরায়েলের পক্ষ নেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনোস্কি। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা। আজ নিরপরাধ ইউক্রেনীয়দের মৃত্যু মিছিল হয়ত জেলেনোস্কিকে সে কথা ভাবাবে।সেই সময় টানা ১১ দিনের ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে ৬৭ জনই ছিল ফুলের মত শিশু।