ওবাইদুল্লা লস্কর,মগরাহাটঃ পৃথিবী যদি ধূমপান মুক্ত হতো কেমন হতো ! রাম ,শ্যাম, যদু, মধু, রহিম,করিমকে ধূমপান করতে দেখি মাঠে- ময়দানে,পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে ,ট্রেনে -বাসে সদা সর্বত্র । মনে হয় পৃথিবী নামক মিল থেকে দৈত্যাকার গরম ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে আগুনের ফুলকি ছেড়ে অনর্গল নির্গত হচ্ছে । মনে হয় গরম চুল্লীর পাশে বসে আছি যে কোনো সময় পুড়ে মরতে পারি ।
অত্যাধিক ধূমপানের ফলে বাতাসে যদি কখনো অক্সিজেন- কার্বনডাইঅক্সাইড এর আনুপাতিক ভারসাম্য হারিয়ে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়, তখন কি হবে ?
তখন পৃথিবীর জীব জন্তুর সহ গাছপালা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে । তখন পৃথিবী পরমাণু বোমা ফাটার মতো ছাই- ভস্মের পৃথিবীতে পরিনত হবে ।
দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া মিলে সৃষ্টি করে আইলা ,লায়লা ,ফনি ,সুনামী আমফানের মতো এক একটা দানব যারা সমুদ্রের গর্ভে থেকে বের হয়ে উল্কার মতো ধেয়ে এসে পৃথিবীকে ছারখার করে দেয় । আমরা তখন আদিম যুগের মতো অসহায় হয়ে ঘরে বন্দী থেকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো পথ পাই না ।
নেশা মুক্ত না হয়ে যদি নেশা যুক্ত পৃথিবী হয় ,কেমন হয় ?
ডান হাতের দুই আঙ্গুলের মধ্যে ধরে রাখা জ্বলন্ত সিগারেট দুই ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে টানতে টানতে গরম ,কালো ধোঁয়া শ্বাস নালীর ভিতর দিয়ে পাকস্থলীতে জমা হতে থাকে । পেটের ভিতরে কালো গরম ধোঁয়া আর বাদবাকিটা মুক্ত বাতাসে অবাধ চরণ । শরীরের মতো পৃথিবীটা বেলুনের মতো কখন ফেটে যায় কে জানে । নেশাখোরদের মাথার যন্ত্রনার সঙ্গে পৃথিবীরও মাথার যন্ত্রনা শুরু হয় । গানের ভাষায় পৃথিবীটা কালো ধোঁয়া বলে আর মনে হয় না ,এখন সে কালোই ধোঁয়া । বাংলা ছায়াছবির একটা হাস্যোদ্দীপক দৃশ্যের কথা মনে পড়ে ।
অভিনেতা সম্ভবতঃ চিনময় রায় হবেন । তিনি সিগারেট টানতে টানতে রুমে প্রবেশ করে চেয়ারে বসছেন । বাঁ পায়ের হাঁটুর উপর ডান পায়ের হাঁটু নাচাতে নাচাতে খোশ মেজাজে সিগারেট টান দিয়ে যাচ্ছেন । টেবিলের উপর থেকে বাম হাতে সকালের খবরের কাগজ নিয়ে চোখ বুলাচ্ছেন । এমন সময় তাঁর ভাগ্নি প্লেটে করে এককাপ গরম চা হাতে দিলে সিগারেটটা ডান পায়ের দুই আঙ্গুলের মধ্যে রেখে ডান হাতে চায়ের প্লেটটা ধরলেন ।
সিগারেটের সঙ্গে চায়ের চুমুক ,খবরের কাগজের উপর চোখ রেখে তিনটে কাজ সমানভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন । নেশার সঙ্গে পানাসক্তে তিনি খোশ মেজাজে । এই বাংলা ছায়া ছবির নামটা জানতে খুব ইচ্ছা করছে । কিন্ত স্মৃতি বেগড়বাই করতে এই মুহুর্তে ওই নামটা মনে করতে পারছি না ।
এমন নেশাগ্ৰস্ত পৃথিবীর নেশা মুক্ত করার দায়ভার কে নেবে ?
এমন নেশগ্ৰস্ত পৃথিবী যদি নেশামুক্ত হতো ,কেমন হতো । বৈদিক ,শান্ত ,নিরুদ্রব জীবনে মুক্ত বাতাসে আধুনিক জীবন কেমন হয় ! সেটা এখন স্বপ্ন মাত্র । এখন একটা কিনলে একটা ফ্রি র মতো সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে দেয়ালে ,রাস্তায় সর্বত্র খৈনি, পানপরাগের পিকের ছড়াছড়ি । কালো ধোঁয়ার নিকোটিনের গন্ধ পৃথিবীতে ফুলের গন্ধ কখনো পাওয়া যায় !