নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলিঃ কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে বানভাসি রাজ্যের একাধিক জেলা। ইতিমধ্যেই এই বন্যার পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড’ বন্যা বলে ডিভিসি’র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের শনিবার বন্যা কবলিত আরামবাগে একইভাবে সোচ্চার হলেন মুখ্যমন্ত্রী। তীব্র কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছাড়ায় এই বিপত্তি। প্রয়োজনে ডিভিসির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে। মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে, ড্যাম সংস্কার করে জল ছাড়ুক। তাতে আমাদের আপত্তি নেই।
এদিন বেলা একটা নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলিকপ্টারে আরামবাগের পল্লীশ্রীর অস্থায়ী হেলিপ্যাডে পৌঁছান। সেখান থেকে সড়কপথে তিনি আরামবাগের কালিপুর এলাকার হোরপুরে পৌঁছান। জমা জলে নেবে বন্যা কবলিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তারা ঠিকমতো খাবার-দাবার পাচ্ছেন কিনা সে বিষয়েও সরাসরি তাদের কাছ থেকে খোঁজ খবর নেন। অসহায় মানুষগুলির পাশে থাকার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না, আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, অসীমা পাত্র, পৌর প্রশাসক স্বপন নন্দী, আরামবাগের প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরাসহ দলীয় নেতৃত্বরা। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মহকুমা শাসক, মুখ্য সচিব, বিডিওরাসহ প্রশাসনের আধিকারিকরা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর তার নির্বাচন ছিল। এদিন রাজ্যকে না জানিয়ে মাইথন ও পাঞ্চেত ব্যারেজ থেকে ৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হল। তার একঘন্টা বাদে বেলা একটার সময় এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ল। এদিনই রাত ৮.৩০ মিনিট নাগাদ ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ল। ৩০ তারিখে মোট প্রায় ৩ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ল। ১ অক্টোবর সকাল ৮.১৫ নাগাদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হল। এদিনই বিকাল ৫.৩০ থেকে আরও ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হল। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হল।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এভাবে জল ছাড়ায় মানুষের তো ক্ষতি হচ্ছেই , বাড়িও ধসে পড়ছে। ডিভিসি আরও ২ লক্ষ কিউসেক জল রিজার্ভ করতে পারে। যদি ড্রেজিং করে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তেনুঘাট, পাঞ্চেত, মাইথন ড্রেজিং করলে প্রতিবার বাংলাকে ভাসতে হয় না। বন্ধু রাজ্য ঝাড়খন্ড সরকারের যে বাঁধগুলি আছে সেই বাঁধগুলি যদি তারা দয়া করে, অনুগ্রহ করে সংস্কার করে। আমরা রিকোয়েস্ট করব। তা না হলে এমন একদিন আসবে ডিভিসির কাছ থেকে আমাদের কম্পেন্সেশন চাইতে হতে পারে। বছরে যদি চারবার করে জল আসে তাহলে সব টাকা জলেই চলে যাচ্ছে। মানুষের তো ক্ষতি হচ্ছে। একবার বাড়িটা সারাচ্ছে। আবার ভেঙে যাচ্ছে। কবার করে করবে। চাষিরা চাষ করছে। জমিগুলো ভেসে যাচ্ছে। এটা কেন হবে? এমন প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ঝাড়খন্ড সরকারকে বলব দরকার হলে আমাদের সঙ্গে বসে একটা প্ল্যানিং তৈরি করব। কেন্দ্রীয় সরকার একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করুক। সেন্ট্রাল গভর্ণমেন্ট ও ডিভিসি বারবার জল ছাড়বে। আমাদের টাকা নিয়ে ইনকাম করবে। ঋণ করবে। আর মানুষকে বারবার জলে ডুবিয়ে দেবে। তা কেন হবে? সুতরাং আমি চাই না মানুষের সমস্যা বাড়ুক। আমি চাই না কোনও রাজ্যের সঙ্গে কোনও রাজ্যের দ্বন্দ্ব হোক। আমরা মিলেমিশেই থাকতে চাই। তাই আমি বলব ঝাড়খন্ডকে ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে। দরকার হলে ঝাড়খন্ডও ডিভিসির সঙ্গে কথা বলুক। আমরাও ডিভিসির সঙ্গে কথা বলব। আগেরবার পর্যন্ত আমাদের জানিয়ে করেছিল। আমরা না জানিয়ে করতে দিই না। রাত তিনটের সময় লোকে ঘুমাবে, সেই সময় জল ছেড়ে দিলে মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় ডুবে যাবে। এটা খুব বড় ক্রাইম। এটাকে আমরা স্ট্রংলি প্রোটেস্ট করি।