এস জে আব্বাস, শক্তিগড়: ১৩ মে চতুর্থ দফা লোকসভা ভোটের একেবারে শেষ মুহূর্তে শনিবার বিকালে বর্ধমান-২ ব্লকের রামনগর খেলার মাঠ থেকে হাট-গোবিন্দপুর পর্যন্ত বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কীর্তি আজাদের সমর্থনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির র্যালিতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। মেঘলা আকাশ ও দুর্যোগের মধ্যেও কর্মী-সমর্থক ও জনতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক ও প্রার্থী কীর্তি আজাদ কে নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুড খোলা গাড়িতে দীর্ঘ প্রায় ৩ কিলোমিটার র্যালি করে হাট-গোবিন্দপুর হাট-তলায় পৌঁছান। যেতে যেতে পথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-শিশুর উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন, কখনও নমস্কারের ভঙ্গিতে প্রণাম জানান। রাস্তার পাশে ছাদের উপর আবেগ বিহ্বল জনতাও তাঁকে আশীর্বাদ জানান , কখনো তারা হাত নেড়ে শুভেচ্ছা, উলূ ধ্বনি,কেউ কেউ আবার অতি ভালোবাসার আবেগে হাতের ইশারায় উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে দেন অভিষেকের দিকে। তিনিও এত মানুষের সমর্থন, উৎসাহ ও ভালোবাসা দেখে উচ্ছসিত হয়ে পড়েন এবং জেতার ব্যাপারে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন। শেষে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণে বিজেপির ভাওতাবাজির বিরুদ্ধে বলেন, এরা মানুষকে ভাতে মারতে চায়, পেটে মারতে চায়। তিনি ব্যাপক হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে বলেন, ১০ বছর আগে জিনিসপত্রের যা দাম ছিল আজ বহুগুণ তা বহু গুণ বেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তফসিলি মায়েদের লক্ষীর ভান্ডারে দিচ্ছে বারোশো টাকা, আর মোদীজি গ্যাস দিয়ে বারোশো টাকাটাও নিয়ে নিচ্ছে।যে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার মায়েদের লক্ষ্মীর ভান্ডারে হাজার বারো শো করে দিচ্ছে, ফ্রিতে রেশন দিচ্ছে আর বিজেপি সরকার গ্যাস দিয়ে সেই টাকা নিয়ে নিচ্ছে। ভাবুন। এরপরই বাংলার গরীব মানুষের তিনি ১০০ দিনের কাজের টাকা ,আবাস যোজনার ঘরের টাকা আটকে রাখা, প্রত্যেকের একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে ঢোকার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি,২কোটি বেকারকে চাকরি দেওয়ার ভাঁওতাবাজি থেকে শুরু করে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে তফসিলি,দলিত , সংখ্যালঘু সহ নারী নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানান।
এরপরেই তিনি সন্দেশখালি ঘটনা নিয়ে বিজেপির ষড়যন্ত্রকে কটাক্ষ করে বলেন, শুধুমাত্র কয়েকটা ভোটের জন্য বাংলার ১০ কোটি মানুষকে ১৪০ কোটি মানুষের কাছে সন্দেশখালি করে ছোট করেছে। ২০০০ টাকা করে এক একটা মহিলাকে দিয়েছে। দিয়ে বলেছে তৃণমূলের কর্মী আর নেতাদের বিরুদ্ধে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ দাও। নইলে এদেরকে তোলানো যাবে না। এ কথা আমি বলছি না, বিজেপি মন্ডলের সভাপতি বলেছে।
তিনি গণতন্ত্রে মানুষের একটি ভোটের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, গণতন্ত্রে মানুষের থেকে সর্বশক্তিমান কেউ নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন মানুষের ভোটেই পঞ্চায়েত সদস্য থেকে এম এল এ, এমপি ,প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, মোদির কাছে রিমোটের বোতাম। আর আপনার কাছে ই ভি এম এর বোতাম। ইভিএম (মেসিনের) এর বোতামটা এখানে টিপবেন, আর ভূমিকম্পটা দিল্লিতে হবে। আপনার সাথে যেভাবে রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম টিপে আপনাকে নিপীড়িত শোষিত অত্যাচারিত অবহেলিত করে রেখেছে, এক ঝটকায় এবার ই ভি এম এর বোতাম টা টিপে এদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ টা অন্ধকার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিতে হবে। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, তৃণমূল জিতলে আপনি আপনার অধিকার পাবেন। আর বিজেপি জিতলে আপনি আপনার অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবেন।শেষে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে একটি সাধু বাবার গল্প শোনান। সাধু বাবার কাছে একটি ইঁদুর বর নিতে নিতে ক্রমান্বয়ে বিড়াল থেকে কুকুর থেকে বাঘে পরিণত হয়েছিল এবং শেষে সেই বাঘই এক সময় ঐ সাধুকে খেতে চায়। পরে, সাধু বাবা অবস্থা বেগতিক দেখে সেই বাঘকে আবার ইন্দুর করে দিয়েছিলেন। তিনি এ ঘটনা টি বুঝিয়ে দেন। এখানে ঐ ইদুর থেকে বাঘ হল বিজেপি। আর সাধুবাবা হল আপনারা জনগণ ভোটার রা। তিনি উপস্থিত জনতাকে তাদেরই ভোটে তৈরি ইদুর থেকে বাঘ হয়ে ওঠা দেশের ও দশের পক্ষে বিজ্জনক বিজেপি-বাঘ কে আবারও ইঁদুরে পরিণত করার আহ্বান জানান।