বিশেষ প্রতিবেদন: বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক (এমইআইটিওয়াই) ২০২১ সালের আইটি রুলের খসড়া আধুনিকীকরণের জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছে তা শুধু মন্দই নয়, একই সঙ্গে বাকস্বাধীনতার বিরোধী। বলা হয়েছে, প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বা পিআইবি যদি কোনও খবরকে ‘ভুয়ো খবর’ বলে চিহ্নিত করে তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সংস্থাগুলিকে সেই খবর বা নিবন্ধ সরিয়ে ফেলতে হবে।
এই পিআইবি একটি সরকারি সংস্থা এবং কোনও খবরের সত্যতা ও যাথার্থ্য বিচার করার অধিকার তাদের নেই। এই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, পিআইবি ছাড়া অন্য কোনও সংস্থাকে ফ্যাক্ট-চেক করার বিষয়ে অথরাইজ করার ক্ষমতা সরকার ও তার দফতরের হাতে থাকবে। এই প্রস্তাব যদি গৃহীত হয়, তাহলে পিআইবির ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দল কোনও সংবাদকে ভুয়ো বলে দেগে দিলে ফেসবুক, ট্যুইটার ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না।
এতে বলা হয়েছে, কোনও খবরের উৎস বিষয়ে উপভোক্তাকে প্রতারিত বা ভুল পথে চালিত করে এমন বিষয় বা জ্ঞাতসারে ও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও ভুল তথ্য প্রকাশ করার অনুমোদন কোনও সংস্থাকে দেওয়া হবে না। কোনও সন্দেহ নেই যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়ো খবর, দায়িত্বজ্ঞানহীন অপপ্রচারমূলক খবরের রমরমা। কিন্তু এই ঘোলাটে পরিসর পরিচ্ছন্ন করতে ভোঁতা অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে না সরকার।
পিআইবির কাজ হল, সরকারের নীতি, প্রোগ্রাম ও উদ্যোগ মেনে মুদ্রিত ও বৈদ্যুতিন মিডিয়াকে তথ্য সরবরাহ করা। কিন্তু খবরের সত্যতা যাচাই করার যোগ্যতা তাদের নেই, বলা ভাল, তেমন প্রশিক্ষণ তাদের নেই। সরকার বিষয়ক খবরের সত্যতা যাচাই করতে তিন বছর আগে ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট তৈরি করা হয়েছিল। তবে, এর ক্রিয়াকলাপ সন্তোষজনক নয় এবং এরা অনেক ভুলও করেছে। সরকারের সমালোচনামূলক যে-কোনও তথ্যকেই তারা ভুল তথ্য বলে বিবেচনা করবে এবং তার উপর কোপ পড়বে। সরকারি এজেন্সিগুলি তাদের সার্ভিসের দায়িত্ব ও শর্ত মেনেই কাজ করে থাকে।
দেশের বর্তমান বাতাবরণে এটি নির্দিষ্ট ভাবে সত্যি যে, কতৃত্ববাদী প্রবণতা ও মনোভাব আরও জোরালো হচ্ছে।
সরকার কেবলমাত্র সেনসরশিপের প্রস্তাবই দিচ্ছে। তবে, একে সরাসরি সেনসরশিপ বলতে চাইছে না। আশ্চর্যের বিষয় হল, পিআইবির মতো সংস্থাকে দিয়ে সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইচ্ছুক। এই পরিস্থিতিতে সরকারই হয়ে উঠবে বিচারক, জুরি ও প্রশাসক।
এডিটর্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়া উল্লেখ করেছে, নিজের মর্জি মতো কোন খবর ঠিক ও কোন খবর বেঠিক তা নির্ধারণ করতে সরকার নিজেকে সার্বিক স্বাধীনতা দিয়েছে।
এর ফলে, সমাজে তথ্যের স্বাভাবিক প্রবাহ রুদ্ধ হবে এবং সাংবাদিকতাকে বহুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। বাকস্বাধীনতা নাগরিকদের প্রাথমিক অধিকার এবং এই অধিকার বলেই মিডিয়া চলে। অবাধ ও মুক্ত মিডিয়া গণতন্ত্রের সমার্থকই শুধু নয়, গণতন্ত্রের প্রাথমিক চাহিদাও। তবে, সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছে তা অগণতান্ত্রিক। এই প্রস্তাবকে এখনই প্রত্যাহার করা উচিত।