পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ফের খবরের শিরোনামে উত্তরপ্রদেশ। যতই নারী স্বাধীনতার প্রসঙ্গ তুলে সরকারের তরফে গলা ফাটানো হোক, তারপরেও প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা। মা ও মেয়েকে জীবন্ত পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত কানপুর। তদন্তের আশ্বাস পুলিশ প্রশাসনের।
কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনায় অভিযোগের তীর পুলিশের বিরুদ্ধেই। স্থানীয় সূত্রে খবর, পুলিশের উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন উত্তরপ্রদেশের কানপুরের দেহাত এলাকার ঘটনা। মৃতাদের পরিবারের দাবি, তাঁদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, নিজেরাই গায়ে আগুন লাগান ওই দুই মহিলা।
প্রসঙ্গত, সরকারি জমি থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করার সময় দুই মহিলার মৃত্যু ঘটে। কানপুরের গ্রামীণ এলাকায় দুই দিন আগেই জবরদখলি জমিতে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ ও প্রশাসন। সেই অভিযানের সময়ই একটি বাড়িতে আগুন লেগে মর্মান্তিক মৃত্যু হল দুই মহিলার। মৃতের নাম প্রমিলা (বয়স ৪৪ বছর) এবং নেহা (বয়স ২১ বছর)।
জানা গেছে, মৃত প্রমিলার স্বামী কৃষ্ণ কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট (মাইথা) জ্ঞানেশ্বর প্রসাদ সোমবার সকালে পুলিশ ও রাজস্ব দফতরের কর্মীদের নিয়ে গ্রাম সমাজের জমিতে অভিযান চালান। মৈথা তহসিল এলাকার মাদৌলি গ্রামে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। তখনই এই ঘটনা ঘটে। কর্মকর্তাদের আনা ‘আর্থমুভার’ মেশিন খড়ের ঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভেঙে ফেলে। সেই সময় প্রমিলা ও তাঁর মেয়ে ভিতরেই আটকা পড়ে আগুনে পুড়ে মারা যান বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এদিকে তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর ভাবে দগ্ধ হয়েছেন কৃষ্ণ কুমারও।
স্থানীয় মানুষ আরও জানিয়েছে, মৃত মহিলার স্বামী কৃষ্ণ কুমারের অভিযোগের পর মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট (মাইথা) জ্ঞানেশ্বর প্রসাদ সকালে পুলিশ ও রাজস্ব দফতরের কর্মীদের নিয়ে গ্রাম সমাজের জমি থেকে দখলদারি অপসারণ করতে মাদাউলি গ্রামে যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের কানপুরের দেহাতে সরকারি জমিতে কোনওরকম আগাম নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযানে চালায়। সঙ্গে নিয়ে যায় বুলডোজার। একের পর এক ঝুপড়ি বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে কিংবা আগুন লাগাতে থাকে পুলিশের আধিকারিকেরা। সেই সময় একটি ঝুপড়িতে ছিলেন প্রমীলা দীক্ষিত, তাঁর কন্যা নেহা ও পুত্র শিবম। সেই অবস্থায় তাঁদের ঝুপড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় পুলিশ। দাবি এলাকাবাসীর। যাতে পুড়ে মৃত্যু হয় মা ও মেয়ের। কোনওরকমে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন শিবম। এরপরেই জনতা ক্ষেপে গিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করে। গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে দেহাত গ্রামের বাসিন্দারা। নৃশংস এই ঘটনায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনায় উত্তপ্ত কানপুরের মাদাউলি গ্রাম। এরপর শত শত গ্রামবাসী ইট-পাটকেল, লাঠি নিয়ে দলে দলে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে এডিজি (জোন) অলোক সিং সহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেরাই মাইথা তহসিল এলাকার মাদাউলি গ্রামে পৌঁছে যান। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন এডিজি অলোক সিং। মতবে এখনই ঘটনায় পুলিশের যুক্ত থাকার বিষয় নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দখল বিরোধী অভিযানের সময় দুই মহিলার মৃত্যু হয়েছে কানপুর দেহাতে। পুলিশ মামলাটি খতিয়ে দেখছে। ঘটনায় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন এডিজি।