সুবিদ আবদুল্লাহ্
টোটোর দৌরাত্ম্য বাড়ছে নবাবি শহর মুর্শিদাবাদে। অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ঘোড়ায় টানা গাড়ি বা টাঙ্গা। শীতের শুরু থেকেই হাজারদুয়ারীতে পর্যটকদের ভিড় জমে। মুর্শিদাবাদের নবাবি শহরে পর্যটক আসা মানে ঘোড়ার গাড়ির রমরমা বাজার। কিন্তু টাঙ্গার বাজারে ভাঁটার টান। কয়েক বছর ধরে পর্যটকরা আর টাঙ্গায় চড়ছে না। পরিবর্তে টোটো বা ই-রিক্সায় চড়ছেন। শহরে যার নাম ‘টুকটুক’।
পর্যটকরা বলছেন– টোটো ছোটো গলির ভেতরেও যাতায়াত করতে পারে। টাঙ্গায় যা সম্ভব নয়। তা ছাড়া টোটোয় ভাড়াও কম। ফলে টাঙ্গা এখন সখের যানবাহনে পরিণত হয়েছে। ইচ্ছে হলে চড়ছে। ইচ্ছে না হলে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।কথা হচ্ছিল টাঙ্গাওয়ালা জহিরুল বিশ্বাসের সঙ্গে। তাঁর কাছে জানা গেল টাঙ্গার জৌলুস হারানোর কাহিনী। কলেজের গণ্ডি পেরিয়েও চাকরি জোটেনি। নিছক পেটের দায়ে টাঙ্গাওয়ালা হয়েছেন জহিরুল। তিরিশ বছর ধরে শহরে পরিচিত টাঙ্গাওয়ালার নাম জহিরুল। তিনি জানাচ্ছেন– ঘোড়ার গাড়ি টানতে টানতে অনেক পর্যটক পরিচিত হয়েছেন। নবাবের শহরে বেড়াতে এলেই তার খোঁজ করেন এইসব পরিচিতরা। জহিরুল জানান– উপরওয়ালার কৃপায় বাঁধা খরিদ্দার হয়ে গেছেন কিছু পর্যটক। কিন্তু টোটো আসার পর থেকে তাঁরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কথার মাঝেই লক্ষ্য করা গেল জহিরুলের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। জহিরুল জানান– সংসার টানতে এখন অন্য কোনও পেশার কথা ভাবতে শুরু করেছি।
উল্লেখ্য– মুর্শিদাবাদে নবাবি যুগে যানবাহন ছিল গরুর গাড়ি। |নিশ শতকে ইংরেজদের হাত ধরে এলো টাঙ্গা। বিশ শতকে প্যাডেল-রিক্সা আসার পর থেকে টাঙ্গার দুর্দিন শুরু হয়। একবিংশ শতকে টোটো এসে কার্যত¬ টাঙ্গার মৃত্যু ঘণ্টা বাজিয়েছে। পাঁচ বছর আগে শহরে টাঙ্গা ছিল ৩৬০টি। এখন শহরে টাঙ্গা রয়েছে ১৬০টি। টাঙ্গাওয়ালাদের অনেকেই টোটো কিনেছেন। পরিস্থিতির সত্যতা স্বীকার করে মুর্শিদাবাদ পৌরসভার চেয়ারম্যান বিপ্লব চক্রবর্তী জানাচ্ছেন– যুগের পরিবর্তনকে আমাদের মানতে হবে। তবে সংখ্যায় কমে গেলেও শহরের ঐতিহ্য হিসেবে ঘোড়ার গাড়ি শেষ হবে না। কিছু পর্যটক সখ মেটাতেই ঘোড়ার গাড়ি চড়বেন।