পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ‘মুসলিম দাঙ্গাকারীরা ৩-৪ হাজার হিন্দুদের নালহার মহাদেব মন্দিরে আটক করে রেখেছিল।’ হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজের এই মন্তব্যে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে, অনিল ভিজের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন খোদ ওই মন্দিরের পুরোহিত দীপক শর্মা। তিনি বলেছেন, ‘বাইরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থাকায় মানুষ মন্দিরের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ তাদের বন্দি বা আটক করে রাখেনি।’ তবে এই হিংসাত্মক ঘটনা যে ঘটতে পারে তার আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক ভিডিয়োগুলি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন উদ্যোগী হলে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোখা যেত বলে মনে করছেন নুহ’র বাসিন্দারা।
পুরোহিত দীপক শর্মা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সাধারণত শ্রাবণ মাসে মন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে। সোমবারে ধর্মীয় শোভাযাত্রা থাকায় ভক্তদের ভিড় আরও বাড়ে। হিন্দুদের মন্দিরে বন্দি করে রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মানুষকে কে বন্দি করবে? তাঁরা ঈশ্বরের আশ্রয়ে ছিলেন। হঠাৎই খবর আসে বাইরের পরিস্থিতি ভালো নয়, তাই তাঁরা মন্দিরে ছিলেন।
নুহ্তে যখন গোষ্ঠী সংঘর্ষে পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, সেই সময় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উসকানিমূলক মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তোলে। দুই হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে ‘ব্রিজমণ্ডল জলাভিষেক যাত্রা’র নামে উগ্র ধর্মীয় শোভাযাত্রা চলাকালীন হিংসা ছড়িয়ে পড়ে নুহ্ শহরে। ওই শোভাযাত্রা থেকে মুসলিম বিদ্বেষী স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানোর ‘প্রচার’ আগেই শুরু করেছিল দুই হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। মোনু মানেসরের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী বজরং নেতা ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেবে বলে প্রচার চলছিল হোয়াটসঅ্যাপে। আর সেটাই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসার বীজ বুনে দেয়। নুহ্তে ওই শোভাযাত্রায় শামিল হওয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল ওই বজরং নেতা। এই সংক্রান্ত ভিডিয়োও ব্যাপকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার করা হয়।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, এই হিংসাত্মক ঘটনার জন্য জেলার পুলিশ-প্রশাসনই দায়ী। দুই সম্প্রদায়েরই কিছু উগ্রবাদী গত কয়েকদিন ধরে সক্রিয় ছিল। তাদের লাগাম পরাতে ব্যর্থ জেলা প্রশাসন। যদিও গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর, তাতে লাগাতার উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিজেপি নেতারা।
নুহ’র এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘কে বা কারা প্রথম ইট-পাথর ছুড়েছে, তা স্পষ্ট নয়, তবে উভয় দলই একে অপরের দিকে পাথর ছুড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, শোভাযাত্রা থেকে হিন্দুত্ববাদীদের ক্রমাগত উসকানিমূলক স্লোগানের জন্যই হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়। নুহ্তে গোষ্ঠী সংঘর্ষ চলার সময় দুষ্কৃতীরা বেশকিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দোকানে ভাঙচুর চালায়।
গুরুগ্রামের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার নিশান্ত যাদব মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তথাকথিত ‘শোভাযাত্রা’ চলাকালীন সোমবার হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে চলে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত মোনু মানেসরের একটি ভিডিয়ো নুহ্তে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে উসকানির কাজ করেছে।
বজরং দলের নেতা মানেসর চলতি বছরের শুরুতে রাজস্থানের ভিওয়ানির জুনায়েদ ও নাসিরকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি পলাতক। তবে সোমবার নুহ’র শোভাযাত্রায় যোগ দেবেন বলে দাবি করে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিতে অস্ত্র হাতে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্যে ভরা একাধিক ভিডিয়োতে ভর্তি।
নুহ্র ধর্মীয় শোভাযাত্রা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য একটি শান্তি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। সেই শান্তি কমিটির সদস্য রমজান চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিশেষ করে মোনু মানেসর এবং বিট্টু বজরঙ্গির ভিডিয়োগুলিতে মুসলিমদের নিয়ে আপত্তিকর ও অবমাননাকর মন্তব্য করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত দুই সম্প্রদায়ের কিছু মুর্খ এবং নির্বোধ মানুষ তাঁদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।’ চৌধুরী আরও বলেন, ‘এমন কিছু যে ঘটতে পারে, তা পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে, মোনু মানেসরকে তাঁরা এই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেবেন না। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে।’