পারিজাত মোল্লা: গত বুধবার কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় এক এলাকাবাসীর রহস্য মৃত্যুতে তপ্ত উত্তর কলকাতার একাংশ। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলে। সেখানে রাজ্যের আইনজীবী বলেন – ‘ ওই ঘটনায় রাজ্যের তরফে সরকারি হাসপাতালে ভিডিওগ্রাফি সহ ময়নাতদন্ত চলছে এদিন’ । তবে নিহত পরিবারের আইনজীবীর দাবি, -‘ কেন্দ্রের অধীনে থাকা কোনও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হোক’। কিন্তু এসবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার পুলিশ মর্গেই অশোক সিংয়ের দেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে। হাইকোর্টে ময়নাতদন্তের বিষয়টি জানিয়েছেন রাজ্যের আইনজীবী । তিনি এদিন এজলাসে জানান, -‘ময়নাতদন্ত চলছে। ভিডিয়োগ্রাফি করা হচ্ছে’। তবে প্রধান বিচারপতি এদিন জানান -‘ পরিবারের কাউকে সেখানে রাখলে ভাল হত’।
দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হবে কি না? সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে আজ অর্থাৎ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় মৃত্যু মামলায় প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম বলেন, “একজন মৃতের একের বেশি ময়নাতদন্ত করা হলে, তা ওই মৃতের পরিবারকে আঘাত করে”। কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে সংবাদমাধ্যমের সামনে পরিবারের তরফে আইনজীবী বলেন, “পরিবার লোকের অনুমতি না নিয়েই এরা ময়নাতদন্ত করে দিয়েছে। আমরা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য বলবই। কারণ, ময়নাতদন্তের সময় ভিডিয়োগ্রাফির কথা বলা হচ্ছে। ভিডিয়োগ্রাফি যাঁরা করছেন, তাঁরাও সরকারের লোক। যাঁরা ময়নাতদন্ত করছেন, তাঁরাও সরকারি লোক। পুলিশও সরকারের।”এদিকে হাইকোর্টে ময়নাতদন্তের কথা বলার পর মৃত অশোক কুমার সিংয়ের দেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে পুলিশ মর্গে।
জানা গেছে , কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের তিন চিকিত্সকের দল ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ মর্গে গিয়েছেন। ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ময়নাতদন্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। আমর্হাস্ট স্ট্রিট থানায় অশোক কুমার সিং নামে এক যুবকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পরিবারের তরফে পুলিশের বিরুদ্ধে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ঘটনার সময়ে থানার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে চাইছে নিহতের পরিবার। কিন্তু থানার পক্ষ থেকে সেই ফুটেজ এখনও তাঁদের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।এই বিষয়টি জানিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিসন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরিবার। পরিবারের দাবি, -‘ যুবকের ময়নাতদন্ত এইমসে করার অনুমতি দিক আদালত। সঙ্গে ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফিও করা হোক’। পরিবারের দাবি, -‘ চুরি হওয়া কোনও মোবাইল না জেনেই কিনেছিলেন অশোক। তারপর তাঁকে থানায় ডেকে নিয়ে যায় পুলিশ’। পরিবারের অভিযোগ,- ‘ মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই অশোক সিংয়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার চালায় পাঁচ জন পুলিশ কর্মী। কেবল সন্দেহের বশেই কোনও প্রমাণ ছাড়া তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়। থানাতে যাওয়ার আগে পর্যন্তও সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন অশোক। কিন্তু থানার ভিতর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়’। গোটার একটি ফুটেজ সামনে এসেছে। আর তা নিয়েই বিতর্ক।পরিবারের দাবি,-‘ থানাতেই পিটিয়ে খুন করে দেওয়া হয়েছে অশোককে’।
যদিও পুলিশের দাবি,-‘ লক আপে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন অশোক। আর তারপরই মৃত্যু’। থানার সিসিটিভি ফুটেজ চাইছে পরিবার। পাশাপাশি চাইছেন, যাতে অশোকের দেহের ময়নাতদন্তে কেন্দ্রের কোনও হাসপাতালে হয়। কারণ যেহেতু এক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুলিশই। তাই রাজ্যের কোনও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হোক, তা চাইছে না পরিবার। তাতে রিপোর্ট প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে এইমস, কিংবা কমান্ড বা রেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করাতে চাইছে পরিবার। সেই আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী অশোক সাউয়ের রহস্য মৃত্যু হয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় । তাঁর মৃত্যুতে পুলিশের বিরুদ্ধে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে । এই ঘটনায় থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করল লালবাজার ।জানা গেছে, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ৪৮ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করল লালবাজার । খতিয়ে দেখা হবে, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ঘটনার আগের দিন থেকে ঘটনার দিন পর্যন্ত কোন কোন ব্যক্তিরা এসেছিলেন ।গোটা ঘটনার তদন্তের নেতৃত্বে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল মুরলীধর শর্মা ।
এছাড়াও লালবাজার ওই ঘটনার দিন থানায় উপস্থিত পুলিশ কর্তা ও কর্মীদের তালিকা তৈরি করেছে । তদন্তকারী আধিকারিকরা ওই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক আধিকারিক, কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলবেন । তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে ।এই ঘটনায় মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, -‘ তারা পুলিশের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে পুলিশ তাদের সেই ফুটেজ দেখাতে অস্বীকার করে’ । আর তাই মৃত ব্যবসায়ী অশোক সাউয়ের পরিবারের অভিযোগ, -‘কেন পুলিশ তাদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে অস্বীকার করছে ? পুলিশ গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে ‘।
প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমে মুখ না খুললেও লালবাজারের এক আধিকারিক নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন -‘ থানার যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা ভালোভাবে পরীক্ষা করবেন । এছাড়া কোনও ব্যক্তিকে থানায় ডেকে পাঠাতে গেলে যে সব নিয়ম মেনে থানায় ডাকতে হয়, সেই সব নিয়ম আদৌ মানা হয়েছিল কি না?সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা’ ।
জানা গেছে, ব্যবসায়ী অশোক কুমার সাউ ২০০ টাকার বিনিময়ে একটি মোবাইল ফোন কিনেছিলেন । তবে সেটি চুরির মোবাইল বলে জানায় পুলিশ । এরপর এই কলকাতা পুলিশের নর্থ ডিভিশন মনিটরিং সেলের তরফে অশোক সাউকে জানানো হয়, তিনি যেন স্থানীয় থানায় এসে ওই মোবাইলটি জমা দিয়ে দেন ।লালবাজার সূত্রে প্রকাশ , গত বুধবার বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে থানায় ঢোকেন অশোক সাউ । সন্ধে ৬ টার পর তার মৃত্যু ঘটে। আজ অর্থাৎ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার ফের শুনানি রয়েছে। এই ঘটনায় এখনও উত্তেজনা রয়েছে আমহার্স্টস্ট্রিট থানা এলাকায়। বিশেষত কলেজস্ট্রিট চত্বরে।