পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: হড়পা বানে ফুঁসে ওঠা মাল নদীর ভরা স্রোতের তোয়াক্কা না করে ঝাঁপ দিয়েছিলেন মাণিক সেক। প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন প্রতিমা বিসর্জন করতে আসা ১০ জনের। এবার এমন ‘মানিকদের’ দেখা মিলল গুজরাতের মোরবিতে। প্রাণবাজি রেখে মাচ্ছু নদীর জল থেকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচালেন কমপক্ষে ৮০ জনের। যাঁদের সাহস ও মানবিকতায় ভর করে এত জনকে প্রাণে বাঁচানো গিয়েছে তাঁদের নাম হোসেন মেহবুব পাঠান, তৌফিক, সাদ্দাম ও নঈম।
যারা জলে হাবুডুবু খাচ্ছিল তাদের পরিচয় কী একবারের জন্যও মাথায় আসেনি এঁদের। প্রাণ বাজি রেখে তাঁরা তখন ঝাঁপিয়েছিলেন ডুবতে বসা মানুষকে উদ্ধার করতে। একবারও তাঁদের মনে হয়নি ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম’। অসীম সাহসী এই চার যুবকের মধ্যে নঈম শেখ উদ্ধার করতে গিয়ে চোট পান। বর্তমানে মোরবি সিভিল হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
মঙ্গলবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তরুণ নঈম সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন। নঈম জানান, ঘটনার দিন বিকেলে তিনি ও তাঁর ছ’বন্ধু ছিলেন মোরবি সেতুতে।
আচমকাই তাসের ঘরে মতো ভেঙে পড়ে সেতু। সেতু ভেঙে বাকিদের সঙ্গে সে ও তাঁর বন্ধুরা জলে পড়ে যায়। ছয় বন্ধুর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। তিনি ও তার পাঁচ বন্ধু কোনওরকমে পাড়ে চলে আসেন। শুরু হয় আর্তচিৎকার। প্রাণ বাঁচানোর করুণ আকুতি। সেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে নইমরা আর থাকতে পারেনি। প্রাণে বেঁচে আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করেই তারা ফের ঝাঁপিয়ে পড়েন নদীর জলে। মানুষকে বাঁচাতে হবে। যতজনকে পারা যায় জল থেকে উদ্ধার করতে হবে। প্রাণে যতটুকু শক্তি আছে, তা উজাড় করে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যান হোসেন মেহবুব পাঠান, তৌফিক, সাদ্দাম ও নঈম।
হুসেন একাই ৫০ জনকে উদ্ধার করেন। হুসেন বলেন, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ফোনে খবর পায়, ‘ঝুলাও’ ব্রিজ ভেঙে পড়ছে। খবর পেয়েই দৌড় লাগাই। আমি দক্ষ সাঁতারু। নেমে পড়ি জলে। কমপক্ষে ৫০ জনের প্রাণ আমি একাই বাঁচিয়েছি। যার মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু ও মহিলা ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকেও জল থেকে উদ্ধার করি। জানান হুসেন। সাদ্দাম বলেন, আমি ভালো সাঁতার জানি না। তাই ওরা যাদের জল থেকে টেনে তুলছিল আমি তাদের নদীর পাড়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা কেউই ভালো হাঁটতে পারছিল না। এই ঘটনা সামনে আসার পর ট্যুইটারের এই ‘হিরোদের’ প্রশংসা করেছেন নেটিজেনদের অনেকে। কেউ কেউ ট্যুইটে লিখেছেন, ‘এটি আসলে বিদ্বেষের সদাগরদের ওপর মোক্ষম আঘাত।’
বাতাস ভরেছে বিদ্বেষে। হিন্দু না ওরা মুসলিম এই প্রশ্ন বারবার তোলা হচ্ছে। অথচ মানিকরা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন বিদ্বেষের জয়রথ মানবিকতার কাছে থমকে যেতে বাধ্য। বাংলার মানিকই হোক কিংবা গুজরাতের হোসেন, তৌফিক, সাদ্দাম কিংবা নাঈম, সকলেই মনে রেখেছে সবথেকে বড় ধর্মের কথা। যার কাছে সব কিছু ছোট। এই তরুণদের প্রাণ বাজি রাখার পর ফের একবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে নজরুলের সেই কালজয়ী কবিতা,
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কাণ্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার…