পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মোদি জমানায় গো-বলয় গুলিতে সংখ্যালঘু নিধন যজ্ঞের চেষ্টার কোনও বিরাম নেই। বারবার চোখে আঙুল দিয়ে সেই ঘটনা সত্যতা জানিয়ে দিচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। এখনও বাকি শেষ দফার ভোটগ্রহণ। দেশজুড়ে জারি রয়েছে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি। এই আবহে মুসলিম যুবক’কে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। গুজরাতের আহমেদাবাদে ঘটনাটি ঘটেছে। সংবাদ মাধ্যমের দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৃতের স্ত্রী সানা জানিয়েছেন, স্থানীয় এক মাংস বিক্রেতার সঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরে বিবাদ লেগেছিল তার স্বামীর। এদিন ভেজালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যায় আজহারউদ্দিন। কিন্তু আর ফিরে আসেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে , থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যেতেই বেজায় রেগে যায় উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকরা। তৎক্ষণাৎ টেনে-হিচড়ে থানায় ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় আজহারউদ্দিনকে। শুরু হয় অকথ্য গালিগালাজ ও প্রহার। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। খবর পেতেই থানায় পৌঁছে যায় আজহারউদ্দিনের পরিবার। তড়িঘড়ি তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হলে ভালো হাসপাতালে আজহারউদ্দিনকে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজহারউদ্দিনের এদিন মৃত্যু হয়। তাঁর ৮ বছরের একটা ছেলে রয়েছে। সানার সংযোজন, মৃত্যুর আগে তার স্বামী সবকিছু বলে গেছে। কীভাবে পুলিশ তাঁকে কোনও কারণ ছাড়াই শারীরিক নির্যাতন করেছে। তার শরীরের অনেক জায়গায় মারের চিহ্ন রয়েছে। তার মাথায়, পিঠে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমি অভিযুক্তদের খুব ভালো করে শনাক্ত করতে পারব।
সরকারি তথ্য অনুসারে, গত দুই বছরে গুজরাতে শুধু জেল হেফাজতে ১৭৩ জন জেলবন্দীর মৃত্যু হয়েছে। এমনকি মৃতের পরিবারকে কোনও ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলেই খবর। সরকারের মতে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় শুধুমাত্র জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং গুজরাত রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে। ঘটনাপ্রসঙ্গে আজহারউদ্দিনের মা শায়রা বলেছেন, আমার ছেলেকে তো ফিরিয়ে আনতে পারব না। কিন্তু ওর ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করব। শায়রা আরও বলেন, কারো জীবন নেওয়ার অধিকার পুলিশের নেই, সে কারণ যতই সঙ্গীন হোক না কেন। দোষ করলে আইন-আদালত ছিল। ওরা নিজেরা মারতে গেল কেন। সংশ্লিষ্ট ঘটনায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়ার (এসডিপিআই) ইরশাদ। এসডিপিআই প্রতিনিধি দল আজহারউদ্দিনের মৃত্যুর মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষী পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত এবং কারাগারে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে। এনসিআরবি-র তথ্য অনুসারে, রাজ্যে টানা তৃতীয় বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক হেফাজতে মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে। আজহারউদ্দিনের মৃত্যুর খবর চলতি মাসে দ্বিতীয় ঘটনা।
সংবিধান অনুযায়ী ভারত ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশ। আইনের চোখে সব ধর্মের সমান অধিকার। কিন্তু আরএসএস-এর সিলেবাসে এই কথাগুলির কোনও গুরুত্ব নেই। তাদের এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, বৈচিত্র্যপূর্ণ বহুত্ববাদের চরিত্রকে মুছে দিয়ে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে গেরুয়াবাহিনী। আর তাঁদের সফট টার্গেট ‘মুসলিম’ সম্প্রদায়।