নিজস্ব প্রতিনিধি: পাহাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে জিটিএ নির্বাচন হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার কার্শিয়াংয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেন– ‘সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ হবে। পাহাড়ের স্থায়ী সমাধান হবে পাহাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই। আমাকে একবার সুযোগ দিন– পাহাড়ের স্থায়ী সমাধান করে দেব।’ নাম না করে পাহাড়ে অশান্তি জিইয়ে রাখার জন্য বিজেপিকেও নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন– ছটপুজো মিটে যাওয়ার পরে ফের পাহাড়ে আসবেন।
গত কয়েক বছর ধরেই কার্যত জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপরে দাঁড়িয়ে পাহাড়। অশান্তিতে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের উন্নয়ন। আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি ঘিরে অশান্তির আগুনে জ্বলছে দার্জিলিং।
এ দিন কার্শিয়াংয়ের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নাম না করে পাহাড়ের অশান্তির জন্য বিজেপিকে নিশানা করে বলেন– ‘ভোটের আগে একটি রাজনৈতিক দল আসে– বিভাজনের রাজনীতি করে আসন জিতে নেয়– কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। বহিরাগতরা এখানে এসে গোলমাল পাকায়। দার্জিলিংকে ভেঙে দিতে চায়। কেন রক্ত ঝরবে দার্জিলিংয়ে’ আমি শান্তির পক্ষে। সুন্দর সবুজ দার্জিলিংয়ে রক্ত ঝরতে দেব না। পাহাড়ে কোনও বিভাজনের রাজনীতি করতে দেব না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলব। পাহাড়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য যেসব পরামর্শ প্রয়োজন– তা দিন। কথা দিচ্ছি– পাহাড়ের স্থায়ী সমাধান করব। দার্জিলিং বাংলার মধ্যেই থাকবে। আমি তোমাদের মদদ করব।’
পাহাড়বাসী গত কয়েকটি নির্বাচনে তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও রাজ্য সরকার যে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম নিয়ে পাহাড়বাসীকে বঞ্চনা করছে না সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মমতা বলেন– ‘তোমরা আমাদের সুযোগ দাও। আমি দার্জিলিংয়ের স্থায়ী সমাধান করে দেব। আমি শুধু বলি না– আমি কাজ করি। আজ পর্যন্ত এমন কি হয়েছে– যা বলেছি করিনি? পাহাড়ের মেয়েরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছে না? কৃষক বন্ধু পাচ্ছে না? ছাত্রছাত্রীরা স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাচ্ছে না? পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত রোশন গিরি ও অনীত থাপাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করারও অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পাহাড়ের স্থায়ী সমাধানের পাশাপাশি জিটিএ নির্বাচন নিয়েও ধোঁয়াশা দূর করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শীঘ্রই জিটিএ নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন– ‘আপনারা সকলেই চান দ্রুত জিটিএ নির্বাচন হোক। কোভিডের জন্য কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছে। এখন ভোটার তালিকা তৈরি হচ্ছে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলেই জিটিএ নির্বাচন হবে।’ বৈঠকে উপস্থিত রোশন গিরি অনীত থাপাকে লক্ষ্য করে মমতা বলেন– ‘জিটিএ নির্বাচন হবে। তার আগে নিজেরা কথা বল। সমস্যা মেটাও। ঝগড়া কোর না।’ উদ্দেশে পাহাড়ে বর্তমানে দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে। তার পরিবর্তে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালুরও ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন– ‘এখানে দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত করা হবে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলব।’
উন্নয়নের প্রশ্নে নাম না করে বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন– ‘সরকারে থাকলেই কি আর উন্নয়ন হয়? উত্তরাখণ্ডে তো এতদিন ধরে বিজেপি সরকার রয়েছে। তাও প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। কোনও উন্নয়ন করতে পারেনি।’
এ দিনের বৈঠকে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য সব দলের প্রতিনিধি– শিল্পগোষ্ঠীদের নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ওই কমিটিকে রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে জিটিএ-র দায়িত্ব দার্জিলিংয়ের জেলাশাসকের কাঁধে ন্যস্ত করেছেন। আগামী ২৩ ডিসেম্বের পাইপের মাধ্যমে বাড়িবাড়ি পানীয়জল সরবরাহ শুরু করারও আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি ঝরনার জল ব্যবহার করে ওয়াটার বটলিং প্ল্যান্ট তৈরিরও পরামর্শ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাহাড়ের ছেলেমেয়েদের স্কিল ডেভালপমেন্টের উপরেও বিশেষ জোর দিয়েছেন তিনি।