সফিকুল ইসলাম (দুলাল): বর্ধমান ফাঁদ পেতে মাছ ধরার বহু উপায়ের মধ্যে ঘুনি অন্যতম। বাঁশের ছোট ছোট কাঠি ও নাইলনের দড়ির উপকরণ সহযোগে মূলত তৈরি হয় ঘুনি। ডোবা-নালা-খাল-বিলে ছোট বড় মাছ খুব সহজে ধরা যায় এই ফাঁদে। কালের স্টেËাতে ঘুনিশিল্প একপ্রকার হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে পুর্ণমাত্রায় ধরে রেখেছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের কুলচৌরা গ্রাম। বর্ধমান সদর শহর থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে অবস্থিত গ্রামটি। গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বেশ কয়েকটি পরিবার বর্ষার আগে থেকেই ঘুনি বুনতে শুরু করেন। বর্ষায় পুকুর খাল বিল মাঠ ঘাট জলে ভোরে গেলে ছোট ছোট কুচল মাছের দেখা মেলে। আর তা ধরতে মূলত গ্রাম-বাংলার মানুষ ঘুনি দিয়ে সহজে মাছ ধরতে শুরু করেন। যার জন্যই ঘুনির চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
কুলচৌরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল– বেশ কয়েকটি পরিবার দিনরাত এককরে ঘুনি বুনে চলেছেন। আশেপাশের গ্রামের খরিদ্দাররা বাড়িতে এসেই ঘুনি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া সপ্তাহে একদিন নিকটবর্তী বাজারেরও চলে বিক্রিবাটা। বাড়ির মহিলারাও এই কাজে সমান দক্ষ। তারাও বাড়ির লোকের সঙ্গে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। ছোট-বড় নানান সাইজের ঘুনি তৈরি করতে দেখা গেল। ন্যূনতম ১০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে তা বাজারজাত হচ্ছে। কথা বলে জানা যায়– বেশ কয়েক পিড়ি ধরেই তারা এই কাজ করে আসছেন। তবে কাঁচা মাল যেমন— বাঁশ– নাইলনের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। তবে লকডাউন পরিস্থিতিতে এই শিল্প কিছুটা হলেও হাসি ফুটিয়েছে। কাজ হারিয়ে অনেকেই এই কাজ করে আয় করছেন। বাড়ির পুরুষ-মহিলা সমান দক্ষ এ কাজে। তবে আবহাওয়ার সাথে ঘুনি বোনার বেশ সম্পর্ক রয়েছে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে মাঠ-ঘাট প্লাবিত হয়। ফলে জমিতে মাছ উঠে আসে– চাহিদা দেখা যায় বেশি। সব মিলিয়ে গ্রামীণ রোজগারে ভালোই পথ দেখছে ঘুনিশিল্প।