পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তেল আবিব যান। ভারতীয় কোনও রাষ্ট্রপ্রধান এই প্রথম ইসরায়েলে মাটিতে পা রাখল। দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল এই সফর, যা মিডিয়ার শিরোনামে আসে। তবে ভারতের সঙ্গে ইসরাইলের এতটা ঘনিষ্ঠতা এর আগে কখনই ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘসময় ভারতের সংবেদনশীলতা ফিলিস্তিনকেই পক্ষেই ছিল। ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি সংঘর্ষের সময় ভারতের সমর্থন সর্বদাই ইয়াসের আরাফতের পক্ষেই ছিল।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু জওহরলাল নেহরু ইসরাইলকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সময় নেন ৩ বছর। ১৯৫০ সালে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। নেহরু মনে করতেন ধর্মের ভিত্তিতে কোনও দেশের ভাগ হওয়া অনুচিত। ইসরাইলকে দেরিতে স্বীকৃতি দেওয়ার কারণও তিনি পরে ব্যাখ্যা করেন। নেহরুর বক্তব্য ছিল, ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে আরব দেশগুলির সংবেদনশীলতায় আঘাত হানতে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। এরপরও ভারত ইসরাইলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চলেছে। বরং ইয়াসের আরাফতের নেতৃত্বে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলওকেই ভারত সমর্থন দিয়ে এসেছে।
ই¨িরা গান্ধির পর রাজীব গান্ধিও ইসরাইলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। ভারতের এই নীতির বিরুদ্ধে দেশে তিক্ত আলোচনা শুরু হয় ১৯৬২ তে চিনের সঙ্গে এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পর। কারণ এই দুই যুদ্ধে আরব দেশগুলি ভারত বিরোধী নীতি অবলম্বন করে। এরপর থেকেই ভারত ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং ফিলিস্তিনের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমে বাড়াতে থাকে। ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে দুটি ফ্যাক্টর কাজ করেছিল। প্রথমত ইরাকের যুদ্ধ এবং সেভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া। এরপর থেকেই ভারত ইসরাইলকেই বন্ধু স্বীকার করে নেয়। কিন্তু ভারতের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক মজবুত হয় অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলেই। কারগিল আক্রমণের সময় ইসরাইল ভারতীয় সেনাকে অস্ত্র সাহায্য করার পরই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হয়। এরপরই ভারত-ইসরাইল অন্যতম বন্ধু হিসেবে প্রকাশ্যে আসে। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এরপর ২০১৭ সালে ভারতের প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী ইসরাইলের মাটিতে পা রাখলেন। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে পা মেলানোর পর ভারত-ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতা সম্পর্ক বিশ্বের সম্যক ধারণা তৈরি হয়। আগামী বছরেই নেতানিয়াহু ভারত সফরে আসতে পারেন। এরপর সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে মনে করছেন বিশ্বের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।