পুবের কলম প্রতিবেদকঃ মমতাকে কুর্ণিশ আদানি সহ দেশের শীর্ষ শিল্পপতিদের। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আগে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রাজ্যের ভাবমূর্তি কলুষিত করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল বিরোধী শিবির ও রাজ্যের সংবাদমাধ্যমের একাংশ। কিন্তু সব চেষ্টাই পণ্ডশ্রমে পরিণত হল। বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই গৌতম আদানি থেকে সজ্জন জিন্দল, নিরঞ্জন হীরানন্দানি থেকে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা দেশের তাবড় শিল্পপতিরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। বাম জমানায় শিল্পবন্ধ্যায় পরিণত হওয়া বাংলায় তৃণমূল জমানায় যে নতুন করে শিল্পের নবজাগরণ ঘটেছে, তা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করে নিলেন প্রত্যেকেই। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের শীর্ষ শিল্পপতিদের প্রশংসাতেই স্পষ্ট শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবেই নন, প্রশাসনিক কর্ত্রী হিসেবেও সফল মমতা বন্দোপাধ্যায়।
করোনার কারণে দু’বছর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করা যায়নি। দু’বছর বাদে আয়োজন করলেও প্রথমদিনেই কার্যত সুপার-ডুপার হিট বাণিজ্য সম্মেলন। নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে এ দিন যেন চাঁদের হাট বসেছিল। বিশ্বের ৪০টি দেশ থেকে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা যেমন হাজির হয়েছিলেন, তেমনই চরম ব্যস্ততার মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অনুরোধে ছুটে এসেছিলেন বিশ্বের ষষ্ঠতম ধনকুবের তথা আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি।
এ দিন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত শিল্পপতিদের বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। বক্তব্য রাখতে এসে জিন্দল স্টিলের কর্ণধার তথা শিল্পপতি সজ্জন জিন্দল মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলায় বিনিয়োগের দুর্দান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলা আজ বিনিয়োগের আদর্শ স্থান হয়ে হয়ে উঠেছে। দেশের জিডিপির চেয়েও বাংলার জিডিপি বেশি।’ শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কার কণ্ঠেও একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘মমতা বন্দোপাধ্যায় হলেন দেশের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর কাছে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। যে কোনও সমস্যার কথা জানালে চকিতেই সমাধান করে দেন। আজ অনেক বদলে গিয়েছে বাংলা। তাঁর কৃতিত্ব অবশ্যই দিদির।’
দেশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসার দিকপাল তথা হীরানন্দানি গোষ্ঠীর কর্ণধার নিরঞ্জন হীরানন্দানি বলেন, ‘গোটা বিশ্ব যখন করোনার থাবায় মন্দায় আক্রান্ত তখন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা ৭.২ শতাংশ সার্বিক বৃদ্ধির ম্যাজিক দেখিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে বরাবরই পরিচিত আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি। তাঁর কণ্ঠেও শোনা গেল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের তাঁর ভাষণে বলেন, ‘কলকাতায় এসে গর্ববোধ করছি। কলকাতা বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। মহামতি গোপাল কৃষ্ণ গোখলে বলেছিলেন, বাংলা যা আজ ভাবে ভারত কাল ভাবে। তাঁর সেই কথা আজও সত্যি। নবজাগরণ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম সব ক্ষেত্রেই বাংলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। বাংলায় যেভাবে নারীশক্তির ক্ষমতায়ণ হয়েছে তা লক্ষ্যণীয়। বিশ্বমঞ্চে প্রশংসিত হয়েছে কন্যাশ্রী। সবুজসাথী সহ আরও সামাজিক প্রকল্প অনেক মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে।’ মমতাকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আপনি বাংলার ঐতিহ্য সগৌরবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই রাজ্য একটি ব-দ্বীপের মতো। আর আপনি সেই রাজ্যে শিল্প, সংস্কৃতি, প্রশাসনিক দক্ষতার মিশেলে এক ব-দ্বীপের মতোই। আপনার জনপ্রিয়তার কোনও তুলনা নেই। আপনার মধ্যে যে ক্যারিশমা রয়েছে তা অসাধারণ।’ মঞ্চ থেকেই রাজ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার বলেন, ‘অন্তত ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্য নিয়েছি।’