পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: অগ্নিগর্ভ মণিপুর। দফায় দফায় চলছে সংঘর্ষ। শান্তি ফেরাতে এ বার কঠোর নির্দেশ দিলেন মণিপুরের রাজ্যপাল৷ বৃহস্পতিবার মণিপুরের রাজ্যপালের তরফ থেকে দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৩ মে মণিপুরে একটি আদিবাসী সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তীব্র অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে৷ সেই ঘটনার জেরে হিংসাত্মক ঘটনা শুরু হয়৷ তাতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
মণিপুর রাজ্যপালের তরফ থেকে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সাব-ডিভিশনাল অফিসার ও সমস্ত একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
সেখানে বলা হয়েছে, ‘চরম কোনও পরিস্থিতে, যখন বোঝানো, সতর্ক করা ও কম ফোর্সে ব্যবহার কাজে আসবে না, তখন ভারতীয় আইন সিআরপিসি, ১৯৭৩-এর আওতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হল৷’
প্রসঙ্গত, মৈতেই ও আদিবাসীদের সংঘর্ষে জ্বলছে মণিপুর। রাজ্যের ৮ জেলায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। বুধবার ‘অল্ ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন’ (এটিএসইউ)-এর পক্ষ থেকে রাজ্যের আদিবাসীদের একজোট করে প্রতিবাদ জানাতে ‘আদিবাসী ঐক্য মিছিল’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মিছিল থেকেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় সংঘর্ষের সূত্রপাত। যা পরবর্তীতে অন্যান্য জেলাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। যা রাজ্যের পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলে। বুধবার রাত থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। নামানো হয় সেনা। নামানো হয়েছে অসম রাইফেলসের বাহিনীও। তপ্ত এলাকাগুলিতে সেনা ও অসম রাইফেলস ফ্ল্যাগ মার্চ করছে। কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে সেনা বাহিনী ও অসম রাইফেলসের শিবিরেই অস্থায়ীভাবে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আসলে রাজ্য সরকারের একটি সিদ্ধান্ত ও এই নিয়ে আদালতের এক রায়ের কারণেই এভাবে তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। মণিপুর হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের তরফে ১৪ এপ্রিল এক নির্দেশিকা জারি করা হয়। সেখানে মৈতেই গোষ্ঠীকে তফশিলি উপজাতি (এসটি) অন্তর্ভূক্ত করার জন্য মণিপুর সরকারকে বিবেচনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পিটিশনে মেইতির পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে, আদালত নির্দেশ দিক মণিপুর সরকারকে কেন্দ্রের তফশিলি জাতি-উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রকে সুপারিশ করার জন্য যাতে তাদের (মৈতেই ) এসটি ভুক্ত করা হয়। এর বিরোধিতা করে বুধবার মিছিল করে এটিএসইউ। তা থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষের সূত্রপাত। একাধিক বাড়িতে, দোকানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। এর আগে এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। মূলত, এই চূড়াচাঁদপুর জেলা থেকেই আদিবাসী বনাম মৈতেইদের সংঘর্ষ এখন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য জেলাতেও।
এদিকে, মণিপুরের হিংসার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। ট্যুইটারে মুখ্যমন্ত্রী চার মিনিটের একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, সমাজের দুই অংশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এই হিংসার ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,
‘গত প্রায় ২৪ ঘণ্টায়, ইম্ফল, চুরাচাঁদপুর, বিষ্ণুপুর, কাংপোকপি এবং মোরেহতে সংঘর্ষ, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের কিছু ঘটনা ঘটেছে। অনেক সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের সমাজের দুটি অংশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির ফলে এই ঘটনাগুলি ঘটেছে। আমরা আমাদের রাজ্যের বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দীর্ঘমেয়াদী অভিযোগগুলিকে যথাযথভাবে সমাধান করা হবে। আমি আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। গুজবে কান দেবেন না। শান্তি বজায় রাখার জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছি। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মণিপুরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক করে তুলতে হবে। এর জন্য আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।’