পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : আমরা আমাদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করব, বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেই বার্তা দিলেন তেজস্বী যাদব। তেজস্বী বলেন, সরকারি দফতরে অনেক শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। সেইগুলো পূরণ করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
বিহারের নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন নীতীশ কুমার। উপ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তেজস্বী যাদব। আর নয়া পদে বসেই লালু পুত্র তেজস্বীর দাবি, ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচন আরজেডির প্রচার চলাকালীন যে ১০ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া দিয়েছিল, এবার নতুন সরকার সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।
তেজস্বী আরও দাবি করেছেন, নীতীশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার আগেই তিনি এই কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে রাজ্যের নয়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা সেরেছেন। কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়াই এখন নতুন সরকারের মূল লক্ষ্য। সেই মর্মে রাজ্যে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার বিজেপির হাত ছাড়েন জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। এর পরেই আরজেডির সঙ্গে জুটি বাধেন তিনি। মহাগটবন্ধনের নেতা নির্বাচিত হন তিনি। এর পরেই অষ্টমবারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফের বিহারের মসনদে বসেন নীতীশ কুমার।
তেজস্বী যাদব এক নিউজ চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, ‘সরকারি দফতরে অনেক শূন্য পদ রয়েছে। আমরা শূন্যস্থানগুলি পূরণ করে কর্মসংস্থানের দিকে এগোব। যতক্ষণ না আমরা বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে পুরোপুরি কার্যকর না হয়ে উঠি, ততক্ষণ এই প্রতিশ্রুতি পূরণ সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এটি শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিহারের সরকারের পক্ষ থেকে এটি আমাদের দায়বদ্ধতা।
নির্বাচনে আরজেডি-নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএর চেয়ে ২৪৩ টি বিধানসভা আসনে মাত্র ১২, হাজার ভোট কম পেয়েছে। তবে আমাদের এই প্রতিশ্রুতি ভোটের জন্য নয়।
তেজস্বীর অভিযোগ, বিজেপি সব সময় পেশিশক্তির ব্যবহার করে নিজেদের অধিকার কায়েম করতে চেয়েছে। যার ফলে মানুষের কাছে এর নেতিবাচক বার্তা গেছে, আর রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে।
তেজস্বী আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, আমাদের সমস্যা হল, আমরা নিজেরা প্রচার করতে জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি প্রচারে পারদর্শী হয়ে গেছে। তবে আমাদের সরকার এবার তার কাজের মধ্যে দিয়ে বিজেপির ভুলগুলি মানুষের সামনে তুলে ধরবে।
তেজস্বী আরও অভিযোগ করে বলেন, বিজেপি একসময় জেডিইউ-এর শরিক হওয়া সত্ত্বেও সেখানেও বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করেছে।
নাম না করে বিজেপির উদ্দেশে লালুপুত্র তথা বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য রাজ্যে তারা যেভাবে টাকা দিয়ে বিধায়ক কিনেছে, বিহারের সঙ্গেও তারা একই কাজ করতে চেয়েছিল। আর এই নিয়ে খুব চাপের মধ্যে ছিলেন নীতীশ কুমার।
ক্ষমতা ভাগাভাগি করার সময় বিজেপি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মর্যাদার মতো ছোটখাটো অনুরোধও মেনে নেয়নি। সেই সময় নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রীকে জনসাধারণের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু নীতীশ কুমারের কথা রাখা হয়নি।
কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার প্যাকেজ ঘোষণা থেকে বিশেষ অর্থনৈতিক অনুদান সব কথাই ভুলে যায় বিজেপি।
বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তেজস্বী দাবি করেন, আমরা সবাই এই সমাজের কর্মী, মানুষ আমাদের হৃদয়ে। আমরা লড়াই করতে পারি, কিন্তু আমরা একসঙ্গে থাকব। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সরকারের প্রাথমিক পতনের জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে এই দাবি করেন লালু পুত্র।
তেজস্বী আরও দাবি করেন, মহাগটবন্ধনের এই শব্দটি চালুই হয়েছিল, তখন নীতীশ কুমার হাত মিলিয়েছিলেন লালু প্রসাদ যাদবের সঙ্গে। নীতীশ কুমার আবার আমাদের মধ্যে ফিরে এসেছেন, এটাই এখন সবচেয়ে আনন্দের বিষয়।
আরও পড়ুন: ‘আমাকে প্রাণে মারার পরিকল্পনা ছিল’
উল্লেখ্য, সরকার ভেঙে পড়ার পর নীতীশকে কাঠগড়ায় তুলে লাগাতার আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, নীতীশের মহাগটবন্ধন সরকার পুরো মেয়াদ টিকবে না। বিজেপির দাবি উড়িয়ে দিয়ে নীতীশ দাবি করে, তার প্রাক্তন সঙ্গীরা সেখানে পৌঁছবে, যেখানে তারা ২০১৫-এর বিধানসভা ভোটে ছিল।