নয়াদিল্লি, ২৭ জানুয়ারি: পরীক্ষার আগে ভয় ভীতি দূর করতে শুক্রবার নয়াদিল্লির তালকোটরা স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের একাধিক পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বর্তমান সময়ে মোবাইল, কম্পিউটারে অতিরিক্ত আসক্তির কুফলের কথা উঠে এল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই। ২০২৩ সালের ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ থেকে ছাত্রজীবনকে বৈদ্যুতিন গ্যাজেটগুলি থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার এই অনুষ্ঠান থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে মোদি বলেন, একজন ভারতীয় গড়ে ৬ ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ব্যয় করেন। এই যন্ত্রের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখার মানে নিজের ভবিষ্যতের সব সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, বৈদ্যুতিন গ্যাজেটের প্রতি তাঁরও আকর্ষণ রয়েছে। ভারতীয় রাজনীতিক মধ্যে নেট মাধ্যম ব্যবহারে প্রথম সারিতে রয়েছে তাঁর নাম। এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করার সময়সূচি আমি নির্দিষ্ট করে নিয়েছি। এদিনের বিশেষ অনুষ্ঠান থেকেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ এই বৈদ্যুতিন যন্ত্রের আকর্ষণ যেন মানুষকে ক্রীতদাসে না পরিণত করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, প্রত্যেকের বাড়িতেই টেকনোলজি ফ্রি জোন রাখতে হবে, যেখানে সে এই মোবাইল, কম্পিউটার, সহ অন্যান্য সমস্ত যন্ত্রের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাফল্যের জন্য কোনও শর্টকার্ট রাস্তা নেই। শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে তাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু কখনই পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বন করবে না। তাতে এক-দু’বার উতরে যেতে পারো। কিন্তু ভবিষ্যতে কোথাও না কোথাও আটকে যাবে। তাই সর্বদা সঠিক ও সৎ পথে চলার চেষ্টা করবে। পড়াশোনার জন্য অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী সন্তানদের না চাপ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওদের উপর প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। নিয়ামানুবর্তিতার পাশাপাশি শিক্ষকদেরও মোবাইল দেখে না পড়ানোরও পরামর্শ দেন তিনি।
অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির বড় পরীক্ষার শেষে পড়ুয়ারা যাতে বাইরের জগৎটা ঘুরে দেখা সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সম্ভব হলে ওদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বাইরের দুনিয়াটা দেখে আসতে বলুন। ফিরে আসার পর জানতে চান, ওরা বাইরের দুনিয়া থেকে কি শিখে এল। জ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগের সুযোগ বাড়াতে মাতৃভাষার পাশাপাশি, প্রতিবেশী রাজ্যের ভাষা শেখারও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদি বলেন, কিছু ছাত্রকে দেখা যায় পরীক্ষায় পাসের জন্য ‘সৃজনশীলতা’র মাধ্যমে নকল করতে। কিন্তু ভালো কাজের জন্য যদি সেই সৃজনশীলতা ব্যবহার করো, তাহলে সাফল্য আসবে।
শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম না স্মার্ট কাজ করা উচিত, ছাত্রদের করা এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ‘বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম’ করতে হবে। পছন্দসই সাফল্যের জন্য সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ কখনই নিজের সম্ভাবনা ছোট করে দেখবে না। সময় পরিবর্তন হচ্ছে, সবার মধ্যেই কিছু আলাদা দক্ষতা আছে। সেগুলি শুধু চিনে নিতে হবে। আমাদের দেশকে একদিন মধ্যমমানের বলা হত, কিন্তু আজ সেই দেশের নাম বিশ্বে জ্বলজ্বল করছে।
২০২৩-এর এই ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য মোট ৩৮ লক্ষ পড়ুয়া তাঁদের নাম নথিভুক্ত করে। মোট ২০ লক্ষ প্রশ্ন জমা পড়েছিল। এনসিইআরটি-র তরফে ঝাড়াই-বাছাই করা প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এবার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পড়ুয়াদেরও যুক্ত হতে বলা হয়েছিল। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিঠি দিয়ে বলেছিল ছাত্রছাত্রীরা যাতে ক্যাম্পাসে বসে টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর ওই অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে।
গতবারের চেয়ে ১৫ লক্ষ বেশি শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান।