আহমদ হাসান ইমরান : মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানকে পরাজিত করেছে। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ার মত হচ্ছে, ভারত জিতলেও সীমান্তের দুইপারে সবার মন জয় করে নিয়েছে পাকিস্তানের ছোট্ট একটি শিশু ফাতিমা। তার বয়স বোধহয় ছয়মাসও পার হয়নি। সে পাকিস্তানের মহিলা দলের ক্যাপ্টেন বিসমা মারুফ-এর কন্যা। কন্যা জন্মের মাত্র কয়েক মাস পরেই বিসমা পাকিস্তান দলে তাঁর অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়েছেন। আর অবশ্যই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে সাধুবাদ জানাতে হবে, তাঁরা বিসমার ছোট্ট শিশুটিকেও তাঁর সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলার জন্য নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সেইসঙ্গে বিসমার নানিকেও ওই একরত্তি শিশুর দেখাশোনার জন্য যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
কিন্তু খবরের শুরু যখন পাকিস্তানের অধিনায়ক বিসমা মারুফ তাঁর শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মউনগানুইতে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। স্টেডিয়াম ছিল ভারত ও পাকিস্তানের দর্শকে পরিপূর্ণ। বিসমা মারুফ নিজ কন্যাকে নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা মাত্র দর্শকরা হাততালি দিয়ে এই মা ও শিশুকে অভিনন্দিত করেন। এর ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আর এর কারণও রয়েছে। সন্তান প্রসবের মাত্র ছয়মাসের মধ্যে একজন মা আবার ক্রিকেটের ময়দানে শুধু ফিরে আসা নয়, বিশ্বকাপে অধিনায়কের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, এটা অবশ্যই অভিনন্দন যোগ্য। তাই ভারতীয় মহিলা খেলোয়াড়রা ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, বিসমা মারুফ সারা দুনিয়ার মহিলা খেলোয়াড়দের জন্য এক অনুপ্রেরণা ও নজির প্রতিষ্ঠা করেছেন। যাঁরা তাঁর প্রশংসা করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্মৃতি মান্ধানা, শাফালি ভার্মা, রেনুকা সিং ঠাকুর, রিচা ঘোষ প্রমুখ। তাঁরা আরও লিখেছেন, ‘ভারত থেকে বেবি ফাতিমার জন্য অনেক অনেক ভালবাসা।’
এখানেই শেষ নয়। পাকিস্তান ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও খেলা শেষে বেবি ফাতিমাকে নিয়ে ভারতীয় মহিলা খেলোয়াড়রা মেতে ওঠেন। এর যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বেবি ফাতিমাকে কোলে নিয়ে গর্বিতা মা বিসমা মারুফ খেলার পাকিস্তানি ইউনিফর্মে বসে রয়েছেন। আর তাঁকে ঘিরে রয়েছেন ইউনিফর্ম পরা ভারতীয় মহিলা খেলোয়াড়রা। আর ভারতীয় খেলোয়াড়দের দেখে মনে হচ্ছিল, তারা পারলে ফাতিমাকে ছিনিয়ে প্রত্যেকেই যেন কোলে তুলে নেবেন।
ভারত-পাকিস্তানের কথিত শত্রুতা, প্রতিদ্বন্দিতা সব যেন ক্রিকেটের রণক্ষেত্রেই উধাও হয়ে গেল! আসলে প্রমাণ হল, উপমহাদেশের খেলোয়াড়রা যেমন তেমনই মানুষও ভালবাসা নিতে ও দিতে চায়। দুই দেশের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, খাবার নানা দিক থেকেই তো শুধু সাদৃশ্য নয়, অদ্ভূত মিল রয়েছে। ভারতীয়দের অনেকেই পাকিস্তান গেলে লাহোরের ‘ফুড স্ট্রিট’ দেখতে এবং অবশ্যই সেখানকার বিরিয়ানি ও কাবাব খেতে নিজেদের গন্তব্যের তালিকায় রাখেন।
কতই না ভাল হত যদি দুই দেশ ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’ ছেড়ে নিউজিল্যান্ডের ওই ক্রিকেট ময়দানের মতো নিজেদের পারস্পরিক ভালবাসায় জড়িয়ে নিত। এ প্রসঙ্গে সবথেকে মূল্যবান কথাটি হয়তো উচ্চারণ করেছেন শচিন তেন্ডুলকর। ট্যুইট করা ছবিটি দেখা মাত্র ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম এই সেরা খেলোয়ড়া শচিন পাল্টা ট্যুইট করে বলেন, ‘কি সুন্দর ও মধুর এক মুহূর্ত! ক্রিকেটের মাঠে অবশ্যই বাউন্ডারি রয়েছে, থাকবে। ময়দানের বাইরে কিন্তু এই বাউন্ডারির কোনও অস্তিত্ব থাকে না।’