মোল্লা জসিমউদ্দিন: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের দুটি পৃথক বেঞ্চে সন্দেশখালি ঘটনায় ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল বিষয়ক মামলার শুনানি চলে। একটি চলে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এর এজলাসে, অপরটি বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে। এদিন বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাস জানায় -‘ পরবর্তী শুনানির দিন পর্যন্ত ইডি বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নয়’।
সন্দেশখালিকাণ্ডে ইডির দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন আদালতে ইডির আইনজীবী সওয়াল করে জানান, “একটা ঘটনায় ৪টে এফআইআর হয়েছে। তার মধ্যে একটা আমাদের বিরুদ্ধে। সেটার কপি পাচ্ছি না।” এদিন আদালতে আইনী রক্ষাকবচের আবেদন জানান ইডির আইনজীবী।যার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত নির্দেশ দিয়েছেন, এই মুহূর্তে ইডির বিরুদ্ধে যেন কড়া পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। মামলার পরবর্তী শুনানি সোমবার।
ওদিকে এদিন রাজ্যের তরফে আদালতে দাবি করা হয় যে,-‘ ইডি পুলিসকে না বলে তল্লাশিতে গিয়েছিল’। এর পাশাপাশি সন্দেশখালিকাণ্ডে এদিন হাইকোর্টে আরও একটি মামলা দায়ের করেছে ইডি। সন্দেশখালিকাণ্ডে এফআইআর খারিজের দাবি নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইডি। মামলা দায়েরের অনুমতি দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। উল্লেখ্য, গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি।
সন্দেশখালিতে তাদের উপরে হামলা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে ইডি। ইডির অভিযোগ, “রেশন দুর্নীতির মামলায় তল্লাশি করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন ইডি অফিসাররা। উল্টে ইডির অফিসারদের বিরুদ্ধে পুলিস এফআইআর করেছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। সব সংবাদমাধ্যমে এটা প্রচার হচ্ছে। আমরা বসিরহাট কোর্টেও খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু সেখানেও এমন কোনও এফআইআর কপি যায়নি। ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়নি।
উলটে প্রতিদিন আমাদের অফিসে পুলিস খোঁজ করছে, কোন কোন অফিসার সেদিন সেখানে গিয়েছিল। আমাদের আশংকা তাদের নামেও নতুন অভিযোগ দায়ের করা হবে হেনস্থার জন্য।” ইডির আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন।তারপর আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ নয় বলে জানিয়ে দেন বিচারপতি। গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশতিন জন ইডি আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল ওই ঘটনার পর।
সন্দেশখালির ঘটনায় ইডির বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই এফআইআর-এর ভিত্তিতে তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। রাজ্যের কাছে এই ঘটনার কেস ডায়েরিও তলব করা হয়েছে। ইডির বিরুদ্ধে করা এফআইআর নিয়ে হলফনামা দিতে হবে রাজ্যকে। এফআইআর খারিজ মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার ইডির আইনজীবী এসভি রাজু এবং ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, -‘ রেশন নিয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে।
তার অনুসন্ধানেই ইডি সন্দেশখালিতে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল। সেখানে আধিকারিকদের আক্রমণ করা হয়েছে। উল্টে সেই আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে’।বিচারপতি মান্থার জানতে চান, -‘ ইডি আধিকারিকেরা কি শাহজাহানের বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন’? ইডি জানায়, -‘অনেক চেষ্টা করেও বাড়িতে তারা ঢুকতে পারেনি। অনেক বার শাহজাহানকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মোবাইল ব্যস্ত ছিল’।
ইডির অনুমান, ওই সময়েই তিনি তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছিলেন। তাঁর ফোন ঘেঁটে জানা গিয়েছে, অন্তত ২৮ বার ফোন করা হয়েছে ওই সময়ের মধ্যে। অথচ, ফোনের টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী, শাহজাহান সেই সময়ে বাড়িতেই ছিলেন। ইডির দাবি, -‘প্রায় তিন হাজার লোক বাড়ির সামনে জড়ো করেছিলেন তৃণমূল নেতা। সবটাই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত’।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এবং আইনজীবী দেবাশিস রায় জানান, -‘সুপ্রিম কোর্টের ললিতা কুমারী রায় মোতাবেক অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এফআইআর গ্রহণ করেছে’।সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে একই দিনে তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল স্থানীয় থানায়। তার মধ্যে দু’টি এফআইআরের বয়ানে মিল নেই।
বিচারপতির প্রশ্ন, -‘এফআইআর গ্রহণ করার আগে পুলিশ কি ন্যূনতম অনুসন্ধান করেছিল?’ বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, -”ধরুন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপর আক্রমণ হয়েছে। ন্যূনতম অনুসন্ধান না করেই কি সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর লিখতে বসে যাবেন? আপনার রায় কি সে কথা বলছে? পুলিশের দুটো অভিযোগ নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। একটি ঘটনার সঙ্গে অন্যটি মেলানো যাচ্ছে না।”,
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রথম দায়ের হওয়া এফআইআরে বলা হয়েছিল, ইডি শাহজাহানের বাড়ির সামনে যাওয়ায় গোলমাল হচ্ছে। মহিলা এবং শিশুদের আক্রমণ করছেন ইডি আধিকারিকেরা। এমনকি টাকাও চুরি করে নিচ্ছেন। তবে সে দিন দুপুরের দ্বিতীয় এফআইআরে অন্য কথা বলা হয়েছে। বিচারপতির মন্তব্য, ”প্রথমে একটি বয়ানে পুলিশ এফআইআর নিল। ওসি স্বাক্ষর করে দিলেন। আবার দুপুরে আর এক জন গিয়ে থানায় উল্টো ঘটনা বললেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেও এফআইআর করা হল।
আর তাতেও ওসি স্বাক্ষর করে দিলেন!”বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ”পুলিশের এক বারও মনে হল না, একটু আগে এই একই ঘটনা নিয়ে এফআইআর গ্রহণ করা হয়েছে? আগে যিনি এসেছিলেন তিনি অন্য কথা বলেছেন! তখন দ্বিতীয় জনকে পুলিশ তো সে কথা বলবে! তা না করে চোখ বন্ধ করে ওসি স্বাক্ষর করে দিলেন! পুলিশের এটা কী ধরনের বোকামি?”বিচারপতি জানান, ‘এ ক্ষেত্রে কোনও চালাকি হয়ে থাকতে পারে।
তাই কোন এফআইআর আগে হয়েছে এবং কোনটি পরে হয়েছে, তা বোঝার জন্য তিনি এফআইআরের কপি সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে পারেন বলে জানিয়েছেন। আগামী ২২ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তত দিন পর্যন্ত ইডির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর নিয়ে পুলিশ কোনও তদন্ত করতে পারবে না বলে বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাস জানিয়েছে।