জিম ড্রাইডেন: মাত্রা ছাড়া মদ্যপানের ফলে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হতে পারছেন না অনেকেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১০০০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। এরা সবাই পূর্ণ সময়ের চাকুরে। এই সমীক্ষাটি চালায় ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা। মদ্যপানজনিত সমস্যা কতদূর বিস্তৃত তা চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। দেখা গেছে, পূর্ণ সময়ের মার্কিন চাকুরেই (প্রায় ১১ মিলিয়ন) মাদকাসক্তির জন্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছেন।
সামাজিক জীবন, কর্মজীবন ও স্বাস্থ্যগত নানা অসুবিধা হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ছাড়তে পারছেন না নেশা। সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয় ১৭ মার্চ, জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেন জার্নালে। সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহলজনিত ব্যধিতে যাঁরা ভুগছেন তাঁরা প্রতি বছর ৩২ দিন কাজে আসতে পারেন না। এর কারণ অসুস্থতা, ক্ষত বা কাজে অনীহা। মদ্যাসক্তি নেই এমন কর্মচারীদের চেয়ে দ্বিগুণ কামাই করেন মাদক-ব্যাধিতে আক্রান্তরা। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অসুস্থদের সকলের অনুপস্থিতির যোগফল বছরে ২৩২ মিলিয়ন দিন। মানসিক রোগের অধ্যাপক লরা জে বিয়েরুট একজন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, মাদক ব্যবহারজনিত ব্যাধি একটা বড় সমস্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রেও বড় অসুবিধা হয় যখন অনেক দিন কাজে না ফেরেন কর্মচারীরা। তিনি আরও বলেন, অতিমারির সময়ে এই সমস্যা সম্ভবত আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে। মানুষ যাতে মাদক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারে সে জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে। এই সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে নীতি-নির্ধারকদের। যাঁরা কর্মী নিয়োগ করেন তাঁদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।
২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে ন্যাশনাল সার্ভে অন ড্রাগ ইউজ অ্যান্ড হেলথ। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন বিয়েরুট ও তাঁর সহকর্মীরা। প্রতি বছর এই সমীক্ষার তত্ত্বাবধান করে সাবস্ট্যান্স অ্যাবিউজ অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ পরিষেবা প্রশাসন। ১২ বছর ও তার ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাঁদের প্রত্যেককে মাদকের ব্যবহার বিষয়ে প্রশ্ন করে তথ্য নেওয়া হয়। কারও মাদক ব্যবহারজনিত ব্যাধি রয়েছে কিনা তা জানতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করা হয় যেমন, মদ ছাড়তে চেয়েও পেরেছেন কিনা, মদপানের ফলে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন কিনা, স্মৃতিভ্রম হওয়ার পরেও মদ পান করা চালিয়ে গিয়েছেন কিনা ইত্যাদি। যাঁরা এই অসুখে আক্রান্ত নন, তাঁদের কর্মক্ষেত্রে কামাই হয়েছে বছরে প্রায় ১৩ দিন। যাঁদের রোগ মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে তাঁদের কামাই হয়েছে প্রায় ১৮ দিন।
এঁদের চেয়ে আরেকটু গুরুতর অবস্থা যাঁদের তাঁদের কামাই হয়ে গেছে ২৪ দিনের কাছাকাছি এবং যাঁরা মারাত্মক সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের প্রতি বছর কামাই হয়ে যায় ৩২ দিন। এই প্রসঙ্গে বিয়েরুট জানান, প্রায়শই দেখা যায়, যাঁরা এতদিন কর্মক্ষেত্রে গরহাজির থাকেন তাঁদের কাজ চলে যায়। তিনি আরও বললেন, আমাদের আশা, কাজের জায়গা হল যোগাযোগেরও জায়গা। সেখানে এই বিষয়ে মতামত আদানপ্রদানও চলতে পারে। আপনি সেখানে ৮ ঘন্টা কাটান। যখন কর্তৃপক্ষ এই ধরনের সমস্যা দেখবে তখন ব্যক্তির সুস্থতার জন্য তারা পদক্ষেপ নিয়ে সহযোগিতা করতে পারে, হয়ত চাকরি থেকে বরখাস্ত সব সময় না-ও করতে পারে।
গবেষকরা জানতে পেরেছেন, পূর্ণ সময়ের চাকুরেদের মধ্যে প্রায় ৯.৩ শতাংশ মানুষ মাদক ব্যবহারজনিত অসুস্থতায় ভোগেন। কর্মক্ষেত্রে তাঁদের অনুপস্থিতির মোট হার ১৪.১ শতাংশ, এই সমস্যা বেশি ভোগেন পুরুষরা। এঁদের বড় অংশ আবার তরুণ। তাঁরা মূলত শ্বেতাঙ্গ বা হিস্পানিক এবং এঁদের আয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যদিও বিশ্লেষকরা কেবলমাত্র পূর্ণ সময়ের চাকুরেদের নিয়েই সমীক্ষা চালিয়েছেন। অতিমারির দিনে অধিকাংশ কর্মচারী যেহেতু দূর থেকে বা বাড়ি থেকে কাজ করেছে, তাই অত্যাধিক গরহাজিরা চোখে পড়েনি কর্তৃপক্ষের। অতিমারি বহু কিছু বদলে দিয়েছে। মানুষের কাজের পদ্ধতি থেকে শুরু করে মদ্যপানের ধরন, সবই বদলেছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, অতিমারির সূচনা পর্বে অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ, সেপ্টেম্বরের দিকে মদের বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল ২০ শতাংশ। সাম্প্রতিক তথ্য জানাচ্ছে, মদের বিক্রি সেই যে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার আর কমার কোনও লক্ষণ নেই। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান সি পার্সলি জানান, অতিমারি শুরুর আগের বছরেই আমরাই নির্দিষ্টভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করা বন্ধ করে দিই যাতে আমরা আমাদের অনুসন্ধান বিষয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হতে পারি। অতিমারির আগের পরিস্থিতির সঙ্গে পরের অবস্থার পার্থক্য থাকতে পারে কারণ বহু মানুষ বাড়ি থেকে কাজ করছেন। গৃহ থেকে কাজ করার সময় মানুষ যে পরিমাণে মাদক সেবন করেছে তা কার্যত আকাশছোঁয়া। কিন্তু এটা দিয়ে কিছু প্রমাণ করতে চাওয়ায় সমস্যা আছে। আমরাও ধীরে ধীরে অতিমারি থেকে বেরিয়ে আসব। বিয়েরুট জানিয়েছেন, এটাও হতে পারে যে, কাজে যাওয়ার রুটিন ও অভ্যাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।