পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: উপর মহল থেকে ‘অর্ডার’ এসেছে। এবার গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে অসম রাইফেলসের জওয়ানদের। এতদিন তাঁদের ভরসাতেই কিছুটা ‘নিশ্চিন্ত’ ছিলেন কাঙ্গপোকপি জেলার সদর দফতর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরের কুকি অধ্যুষিত গামগিফাই গ্রামের বাসিন্দারা। জওয়ানদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে এই খবর কানে যেতেই দলে দলে কুকি মহিলারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের অনেকে জওয়ানদের পা ধরে কাকুতি-মিনতি করেন গ্রাম ছেড়ে চলে না যাওয়ার জন্য। এমনকী জওয়ানদের এই বদলির অর্ডারের বিরুদ্ধে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক।
আসলে পাশেই মেইতেই অধ্যুষিত জেলা ইম্ফল পশ্চিমের সীমান্ত। সেই হিসেবে গামগিফাই গ্রামটি হচ্ছে সীমান্ত সংলগ্ন কুকিদের শেষ গ্রাম। তাছাড়া এই গ্রামে কুকিদের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। স্বাভাবিকভাবেই জওয়ানরা চলে গেলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন, তাঁদের উপর হামলা চালাতে পারে মেইতেইরা। ভয়ংকর অত্যাচার করা হতে পারে মহিলাদের উপর। কুকি মহিলাদের অভিযোগ, রাজ্য প্রশাসন তাঁদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। অন্যদিকে, মেইতেইদের প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছে। তাই জওয়ানরা চলে গেলেই তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে মেইতেইরা। তাছাড়া প্রশাসনের থেকে অস্ত্র লুট করে মেইতেইরা সশস্ত্র বাহিনীও তৈরি করেছে। ফলে তাদের মতো গরিব ও আদিবাসীদের পক্ষে সেই সশস্ত্র মেইতেইদের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।
উল্লেখ্য, জওয়ানদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার তারা ১২ ঘণ্টা ধরনাও চালিয়েছিল। ওইদিন দুপুর ২টা নাগাদ গ্রামের কুকি মহিলাদের কাছে খবর আসে, তাঁদের গ্রাম সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা অসম রাইফেলসের জওয়ানদের রাজ্য সরকার ১১০ কিলোমিটার দূরের চূড়াচন্দ্রপুরে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপরই তারা দলে-দলে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে থাকে। অসম রাইফেলস হচ্ছে সেনা আধিকারিক পরিচালিত আধা সামরিক বাহিনী। কুকি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি সংগঠন (কমিটি অন ট্রাইবাল ইউনিটি)-এর সম্পাদক লাম্মিন লুন সিঙ্গসিট জানিয়েছেন, গ্রামের কুকি মহিলারা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন যাতে জওয়ানরা ফিরে যেতে না পারে। তাঁর কথায়, ‘গ্রামের মেয়েরা জওয়ানদের পা ধরে কাকুতি-মিনতি করেছেন। হাতজোড় করে অনুরোধ করেছেন গ্রাম ছেড়ে চলে না যাওয়ার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, জওয়ানরা চলে গেলে মেইতেই জঙ্গিরা তাঁদের উপর হামলা চালাবে। যদিও পরে এক সেনা অফিসার কুকি মহিলাদের জানান, তাঁদের চূড়াচন্দ্রপুরে যাওয়ার সরকারি অর্ডার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা আপাতত এই গ্রামেই থাকছেন। তাঁদের থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর কুকি মহিলারা ধরনা তুলে নেন।