পারিজাত মোল্লা: অবশেষে বহাল হলেন যোগেশচন্দ্র ল কলেজের অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েঙ্কা ভট্টাচার্য। তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় । বুধবার সিঙ্গেল বেঞ্চের দেওয়া নির্দেশ খারিজ করল ডিভিশন বেঞ্চ ।যোগেশচন্দ্র ল’ কলেজের অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েঙ্কা ভট্টাচার্যকে পুনর্বহালের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ।যোগেশচন্দ্র ল’ কলেজের অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়েঙ্কা ভট্টাচার্যকে তাঁর পদে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । বুধবার বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে । এর আগে ৫ অক্টোবর সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন ।
এদিন কলকাতা হাইকোর্ট স্পেশ্যাল অফিসার অর্ককুমার নাগকে অবিলম্বে অধ্যক্ষের ঘরের তালা খুলে তাঁকে পুনরায় দায়িত্বে বহাল করতে নির্দেশ দিয়েছে । তবে প্রিন্সিপালের অপসারণের মূল মামলার মেরিট অনুযায়ী শুনানি হবে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেই । মেরিট অনুযায়ী ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় বলে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে ।এছাড়া চারু মার্কেটের ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ১২ অক্টোবর অধ্যক্ষকে পুনরায় পদে বহাল করার সময় তাঁকে উপস্থিত থাকতে হবে কলেজে । সেই সময় যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তা দেখার দায়িত্ব তাঁর উপরেই দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ।
এই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, -‘ অধ্যক্ষকে অপসারণের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের মধ্যে স্বাভাবিক ন্যায়ের যে ধারণা, তাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে । শুধুমাত্র টেলিফোনিক আলোচনার উপর প্রিন্সিপালের অপসারণের সিদ্ধান্ত ঠিক নয় । ২০১৫ সালে তাঁকে কলেজ সার্ভিস কমিশনের সুপারিশে নিয়োগ করা হয় ।অধ্যক্ষ সুনন্দা গোয়াঙ্কা ভাট্টাচার্যের আইনজীবী এদিন জানান, -‘ ১৯৯৮ সালে তাঁকে নিয়োগ করার সময় কলেজটি বেসরকারি ছিল । তখন ইউজিসির নেট স্লেট যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল না । পরে ২০১৫ সালে ২৬ ডিসেম্বর কলেজ সার্ভিস কমিশন তাঁকে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ করে থাকে ‘ । গত ৫ অক্টোবর তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় । অভিযোগ, তাঁর প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না-থাকলেও তিনি অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন । আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “আইনজীবীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । এটা কি কোনও আইনি প্রক্রিয়া ? এত তাড়া কীসের ?”এদিকে মামলাকারী আইনজীবী কে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “আপনি কলেজের ছাত্র । আপনার কেন মনে হল অধ্যক্ষকে অপসারণ করা প্রয়োজন ?” ওই আইনজীবী বলেন, “যোগ্য শিক্ষক আমায় পরিচালিত করবেন, এই অধিকার আমার আছে ।” এদিকে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, “এত বছর কী করছিলেন ? ঘুমোচ্ছিলেন ? অধ্যক্ষকে অপসারণের আবেদন জানিয়েছেন । এতটা স্পর্ধা হয় কী করে ?”আইনজীবী আরও বলেন, “তাঁকে একাধিক বার শোকজ করা হয় । প্রশাসনের অনুসন্ধান কমিটির সামনে তাঁকে হাজিরার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল । তিনি হাজির হননি ।” রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী বলেন, “তাঁকে নিয়োগের জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় “। কলেজ সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী বলেন “আমি কখনও শুনিনি স্পেশাল অফিসার কলেজ চালাচ্ছে । কোনও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই সরিয়ে দেওয়া হল । বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ করা হোক । ফের একক বেঞ্চে শুনানি হোক । অধ্যক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য শুনে তার অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক । নিয়োগের সময় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল ।”
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের অধ্যক্ষ সুনন্দা ভট্টাচার্য গোয়েঙ্কাকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সেই নির্দেশ খারিজ হয়ে গেল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, -‘বাধাহীন ভাবে কলেজে প্রবেশ করতে পারবেন তিনি’।বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল,-‘ আর কলেজে ঢুকতে পারবেন না অধ্যক্ষ সুনন্দা ভট্টাচার্য গোয়েঙ্কা’। তাঁর সঙ্গে অপসারণের নির্দেশ ছিল আরও এক অধ্যাপিকা অচিনা কুণ্ডুর। যোগ্যতা না থাকার কথা তুলেই এই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। তিনি এও জানিয়েছিলেন, -‘যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে ফের দুজনকেই তাঁদের পদে পুনর্বহাল করা হবে। ততদিনে অফিস তালাবন্ধ হয়ে থাকবে’। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ এমনটা মনে করছে না। তারা জানায়, -‘বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আদালত নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার অধ্যক্ষের অফিসের তালা খুলে দেবেন। এছাড়া অক্টোবরের স্বাভাবিক বেতনও পাবেন অধ্যক্ষ’।উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য সংক্রান্ত মামলার সঙ্গে এই মামলার যোগসূত্র আছে। অভিযোগ ছিল, তিনি প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু অধ্যাপককে নিযুক্ত করেছেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে।যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের অধ্যক্ষ সুনন্দা ভট্টাচার্য গোয়েন্কাকে অপসারণের নির্দেশ খারিজ করল ডিভিশন বেঞ্চ। সুনন্দা ভট্টাচার্য গোয়েনকা কে অপসারণ এবং তাঁর অফিস তালাবন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়।
বুধবার সেই নির্দেশ খারিজ করে দিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।