এম এ হাকিম, বনগাঁঃ উত্তর ২৪ পরগণার পেট্রাপোল সীমান্তে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, ট্রাক মালিক সংগঠন ও অন্যান্য সংগঠনের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভের জেরে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনকারীরা রীতিমত মঞ্চ বেঁধে পালা করে একনাগাড়ে ধর্না-অবস্থান চালু রেখেছেন। তাঁরা ‘ইন্দো-বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সেভিং এসোসিয়েশন’ লেখা সম্বলিত ধর্না মঞ্চে বনগাঁর যশোর রোড ও মিলিটারি রোডের সংযোগস্থলের মুখে একটানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত সোমবার থেকে ওই ইস্যুতে অচলাবস্থা শুরু হলেও বুধবারও তা অব্যাহত ছিল। বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ নব ট্রাক মালিক সমিতি, বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সীমান্ত পরিবহণ মালিক সমিতি, বনগাঁ মহকুমা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন, বনগাঁ মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, জনপথ পরিবহণ মজদূর ইউনিয়ন, ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন সীমান্তে কর্মবিরতি চালানোয় দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার এ প্রসঙ্গে বনগাঁ নব ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি হজরত আলী মণ্ডল বলেন, ‘এলপিআই ম্যানেজার নতুন নতুন নিয়ম চালু করায় ট্রাক মালিক, ট্রাক চালক ও অন্যরা সমস্যায় পড়েছেন। ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়া গাড়ি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসার কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৪ দিন পর্যন্তও রেখে দেওয়া হয়। এ ভাবে বাংলাদেশে আমাদের গাড়ি পড়ে থাকলে সেখানে গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং গাড়ির চালক ও সহকারীরা দুর্ভোগে পড়েন। আগে যেভাবে যাতায়াত করা যেত সেভাবে না করা হলে আমাদের আন্দোলন চলবে’ বলেও বনগাঁ নব ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি হজরত আলী মণ্ডল মন্তব্য করেন।
ওই ইস্যুতে শ্রমিক নেতা প্রভাস পাল বলেন, ‘গত সোমবার থেকে আজ বুধবার এক্সপোর্ট বন্ধ থাকলেও পেট্রাপোল স্থল বন্দরের ম্যানেজারের কোনও মাথাব্যাথা নেই। এখানে ৮ টা সংগঠন যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যদি কোনও সুরাহা না হয় তাহলে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট করব না। বাংলাদেশে আমাদের পাঠানো হচ্ছে কোনও প্রমাণপত্র ছাড়াই। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে আমাদের এক ড্রাইভারকে চপার দিয়ে দুর্বৃত্তরা কোপালেও ওরা কোনও অভিযোগ নেয়নি, পদক্ষেপ গ্রহণ করাও হয়নি। আমরা তাকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছিলাম। আমাদের উপযুক্ত নথিপত্র ছাড়াই বাংলাদেশে পণ্যবাহী ট্রাক দিয়ে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সেই সরকারি আধিকারিকরা আমাদের বলছেন গাড়ির কাগজপত্র ঠিকঠাক দিন, লাইসেন্স ঠিক দিন ইত্যাদি। কিন্তু আধিকারিকরাই আইন মানছেন না। তার কারণ, বাংলাদেশে আমাদেরকে যেভাবে আমাদের পণ্যবাহী ট্রাক পাঠানো হয় প্রকৃতপক্ষে ওইভাবে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’
পেট্রাপোল সীমান্তে সম্প্রতি পণ্যবাহী ট্রাকের যথাযথ কাগজপত্র, ড্রাইভারদের উপযুক্ত লাইসেন্স ইত্যাদি ইস্যুতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিএসএফ এ ব্যাপারে কড়াকড়ি শুরু করেছে। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাক চালক, ট্রাক মালিক সংগঠন ও অন্যরা। তাদের দাবি, সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ধর্তব্যের মধ্যে আনা চলবে না। বাণিজ্যের স্বার্থে বিষয়টির সরলীকরণ করতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা কমন পরিচয়পত্র তৈরি করতে চান। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ বায়োডাটা জমা দিলে তারা পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ শুরু করবেন। এটি বেআইনি কার্যকলাপ রোধে সহায়ক হবে.