পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: নিপা ভাইরাসের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। এই মুহূর্তে নিপা ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে কেরল। মস্তিষ্কে আক্রমণকারী ভয়ঙ্কর নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিপায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫-এ। পশুপাখির মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে নিপা।
ফলাহারী বাদুড় বা ‘ফ্রুট ব্যাটস’ এর মাধ্যমে মূলত নিপার সংক্রমণ ঘটে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই, কেরলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কেরলের কোঝিকোড় জেলায় সমস্ত স্কুল-কলেজ দু’দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়ার নির্দেশে ইতিমধ্যেই নিপা ভাইরাসের মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের একটি দল গঠন করা হয়েছে। গত দুদিন ধরে রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে নিপা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা থাকলেও সরকারিভাবে কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
দেশের বৃহত্তম হাসপাতাল, দিল্লির এইমস-এ নিপা ভাইরাস মোকাবিলায় সমস্ত রকম ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দিল্লির লোকনায়ক হাসপাতালে পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই, তবে প্রয়োজনে পরীক্ষা সব রকম ব্যবস্থা করা যেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, নিপা ভাইরাসের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নেই।
দিল্লি এইমস-এরû কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় রাই সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নিপা নতুন কোনও ভাইরাস নয়, তাই শনাক্ত করাও কঠিন নয়। পরীক্ষা করার জন্য টেস্টিং কিট সর্বত্র সহজলভ্য নয়। অ্যান্টি বডি টেস্ট বা আরটিপিসিআর টেস্টের মাধ্যমেও এই ভাইরাস শনাক্ত করা যায়।
নিপা ভাইরাস কম সংক্রামক, কিন্তু অন্য ভাইরাসের তুলনায় নিপা বিপজ্জনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। দিল্লির লোকনায়ক হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. সুরেশ কুমার বলছেন, ‘দিল্লি-সহ উত্তর ভারতে নিপা ভাইরাসের একটিও কেস নেই। এই হাসপাতালে নিপা ভাইরাস পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। এখন পর্যন্ত আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনও নির্দেশ পাইনি। এই রোগটি এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র কেরলে দেখা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ (ডব্লিউএইচও) মতে, নিপা ভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল মানুষকে সচেতন করা। এটি একটি জেনেটিক ভাইরাস, যা প্রাণীদের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। নিপা ভাইরাস সংক্রমণের পর শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এই ভাইরাসের লক্ষণ মানুষের মধ্যে ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে দেখা যায়।
নিপা ভাইরাসের উপসর্গের মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। নিপা ভাইরাসের গুরুতর লক্ষণগুলি বমি, পেটে ব্যথা, খিঁচুনি এবং এমনকি কোমায় চলে যাওয়া।
হু-র মতে, যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন তারা খুব তাড়াতাড়ি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। নিপা ভাইরাস পশু থেকে মানুষের শরীরে ঢোকে। বাদুড়, শূকর, কুকুর, বিড়াল, ছাগল-সহ গৃহপালিত প্রাণীর শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। এ রোগে বেশিরভাগ রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় এই ভাইরাস প্রথম দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে ২০০১ বেং ২০০৭-এ নদিয়া জেলা নিপা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল।
এরপর, ২০১৮ সালে, কেরলের কোঝিকোড় এবং মালাপ্পুরম জেলায় ২৩ জনের শরীরে নিপা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে ১৭ জন মারা গিয়েছিল।