পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভারতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতার মান খর্ব হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের তৈরি ২০২৩-এর একটি প্রতিবেদনে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নয়াদিল্লির সেন্টার ফর পলিসি গবেষণার উপর বিদেশি তহবিল সম্পর্কিত বিধিনিষেধ আরোপ করার একদিন পরে এই গবেষণা প্রকাশ্যে আসে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক সদস্যদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্র ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।
জার্মানি ও সুইডেনের গবেষকদের দ্বারা তৈরি এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর ২০১৪-এর পরে সেটি আরও কমেছে। গবেষকদের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী সূচক মানদণ্ড পাঁচটি ব্যবস্থা নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে রয়েছে গবেষণা ও শিক্ষাদানের স্বাধীনতা, শিক্ষাক্ষেত্রে মত বিনিময় ও প্রচারের স্বাধীনতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন, শিক্ষাক্ষেত্র ও সাংস্কৃতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ক্যাম্পাসের অখণ্ডতা, যার অর্থ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা লঙ্ঘন এবং নজরদারির অনুপস্থিতি।
সুইডেনের গোথেনবার্গের ভি-ডেম ইনস্টিটিউট এবং ফ্রেডরিখ আলেকজান্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট সহ বিশ্বব্যাপি ২১৯৭ জন গবেষকের তৈরি এই প্রতিবেদনটি সামনে আসে।
ভি-ডেম ইনস্টিটিউট একটি স্বাধীন একাডেমিক রিসার্চ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, যারা ২০২১ সালে এই ধরনের একটি প্রতিবেদন সামনে আনে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, ২০১৬ ভারতের নির্বাচনী গণতন্ত্রের পতনের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়েছে নির্বাচনী স্বৈরাতন্ত্রের।
ফ্রেডরিখ আলেকজান্ডার ইউনিভার্সিটির গবেষক লার্স পেলকে সহ অপর এক লেখক বলছেন, ভারতে স্বৈরাচারীকরণ প্রক্রিয়ার সমান্তরালে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার পতন ঘটেছে। স্বৈরাচারের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্রমাগত চাপের মুখে পড়তে দেখা যাচ্ছে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় সমাজ বিজ্ঞান গবেষক নন্দিনী সুন্দর, অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গওহর ফাজিলি ২০২০ সালে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্র ক্রমবর্ধমান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আটকে আছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
সেইসঙ্গে নন্দিনী সুন্দর ও গওহর ফাজিলি তাদের গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার পাশাপাশি তাদের নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। এমনকী ভিন্নমত পোষণকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার ও বৃত্তি প্রত্যাহার করা সহ ছুটি প্রত্যাখ্যান, পদোন্নতি স্থগিত বা বাতিল করা সহ অবসরকালীন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।