পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: গোয়ায় ৪ বছরের শিশুসন্তানকে খুন করে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন উচ্চশিক্ষিতা সূচনা শেঠ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সেটি আর করে উঠতে পারেননি। গোয়া পুলিশ জানিয়েছে, নিজের সন্তানকে খুন করে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেলো সূচনা।
অত্যন্ত মেধাবী এই সূচনা কিভাবে এই কাণ্ড ঘটালেন তা নিয়ে হতবাক তার বন্ধুরা। সূচনা বেঙ্গালুরুতে থাকলেও তার সঙ্গে যোগ মিলেছে কলকাতার। দক্ষিণেশ্বরে জন্ম সূচনার। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। স্কুলের গণ্ডি পার করে কলকাতার ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটিতে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে স্নাতক হওয়ার পর ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৮ সালে লাভ করেছিলেন পদার্থবিদ্যায় প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। প্লাজমা ফিজিক্স এবং অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ছিল সূচনার স্পেশাল পেপার।
ফিজিক্সে স্নাতকোত্তর হওয়ার পাশাপাশি কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সংস্কৃতে পিজি ডিপ্লোমা শংসাপত্র রয়েছে তাঁর। কর্মজীবনেও তার সাফল্য ছিল নজরকাড়া। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্টার্ট-আপ সংস্থা মাইন্ডফুল এআই ল্যাবের সিইও সূচনা শেঠ। ২০২১ সালে এআই এথিক্সে প্রথম ১০০ জনের তালিকায় ছিল তাঁর নাম। ডেটা সায়েন্সের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাজ করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টারে। ম্যাসাচুসেটসের বস্টনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালনায় অবদানও রেখেছেন তিনি।
সূচনার প্রাক্তন স্বামী ভেঙ্কট রমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষক। ২০১৯ সালে ছেলের জন্মের পরেই তাঁদের দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় অশান্তি।
গত ৬ জানুয়ারি গোয়ায় ক্যানডোলিমে সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে শিশু সন্তানকে নিয়ে উঠেছিলেন সূচনা। সেই রুম চেক আউট করার পরে এক কর্মী গিয়ে সেখানে রক্তের দাগ দেখতে পান। তিনি হোটেলের ম্যানেজারকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রক্তের দাগওয়ালা একটি তোয়ালে উদ্ধার করে। সূচনা গ্রেফতারের পর পুলিশকে জানান, ওটি ঋতুস্রাবের দাগ। কিন্তু পরে পুলিশ জানতে পারে হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন সূচনা। এই মুহূর্তে ৬ দিনের পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। কেরলের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে জাকার্তায় থাকেন তার প্রাক্তন স্বামী। শিশুটির মৃতদেহ রাজাজি নগরের হরিশ্চন্দ্র ঘাটে নিয়ে গিয়ে এদিন শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন সূচনা প্রাক্তন স্বামী ভেঙ্কট রমন।
হিরিউর তালুক হাসপাতালের প্রশাসনিক আধিকারিক ডাঃ কুমার নায়েক জানিয়েছেন, শিশুটিকে বালিশ বা কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে, যাকে বলা হয় স্মোদারিং। শ্বাসরোধের কারণের মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। তবে শিশুটির শরীরে ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। রিগর মর্টিস দেখা দেয়নি দেহে। রক্তক্ষরণ কিছু হয়নি।
গোয়া পুলিশ তদন্তে জানিয়েছে, সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টের যে রুমে সূচনা শেঠ ছিলেন সেই ঘর থেকে দুটি কাফ-সিরাপের খালি বোতল উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, সূচনা খুনের আগে তার সন্তানকে কড়া ডোজের কাফ সিরাপ খাইয়ে অচেতন করে দেয়। পুরো ঘটনাই পরিকল্পনামাফিক।
সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টের কর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সূচনা হোটেলের কর্মীদের জানিয়েছিলেন তার কাশি হচ্ছে, তাই কাফ-সিরাপ এনে দিতে। তবে সূচনা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি এই খুন করেননি, শিশুটি ঘুম থেকে ওঠার পর মারা গেছে। সূচনার দাবি মতো শিশুর মৃত্যু স্বাভাবিক হলে, সে ডাক্তার না ডেকে কেন দেহ ব্যাগবন্দী করলেন তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন? তবে খুনের আগে শিশুটিকে কাফ সিরাপ খাওয়ানোর বিষয়টি বাড়তি মাইলেজ দেবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারি অফিসাররা।
সোমবার রাতে সূচনা শেঠকে কর্নাটকের চিত্রদূর্গা পুলিশ গ্রেফতার করে, তাকে গোয়া পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, সূচনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর সন্তানকে সপ্তাহের একটি রবিবার বাবার কাছে যেতে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। সেই নির্দেশ মনের দিক দিয়ে মেনে নিতে পারেননি সূচনা। কারণ সূচনা দেখেছিলেন, সন্তানকে কাছে পেলেই তার প্রাক্তন স্বামী খুব খুশিতে থাকে। কিন্তু প্রাক্তন স্বামীর কাছ থেকে এই খুশি কেড়ে নিতেই চরম সিদ্ধান্ত নেন সূচনা। আপাতত সবই তদন্তসাপেক্ষ্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।