পুবের কলম প্রতিবেদক: মারাত্মক রকমের বমি করছিল ১৪ মাস বয়সের এক শিশু। এর সঙ্গে ছিল প্রবল শ্বাসকষ্ট, ডিহাইড্রেশন। হাসপাতালে যখন আনা হয়েছিল তাকে, সব মিলিয়ে সে তখন নেতিয়ে পড়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় অতি বিরল প্রাণঘাতী জন্মগত শারীরিক ত্রুটির শিকার এই শিশু। অবশেষে ইমারজেন্সি ভিত্তিতে অপারেশনের মাধ্যমে এই শিশুর প্রাণরক্ষা করলেন কলকাতার আনন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি এক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
এই শিশুর শারীরিক অবস্থার বিষয়টি নিয়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা এমনই জানিয়েছেন, জন্মগত কারণে এই শিশুর শারীরিক ত্রুটির জেরে বিপদ ঘটে যেতে পারত যে কোনও মুহূর্তে। যার পরিণতিতে বাঁচিয়ে রাখা আর সম্ভব হত না এই শিশুকে। এই অবস্থায় তার ১৪ মাস বয়সে দেখা দেয় বিপদ। বেসরকারি ওই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিওনেটোলজি অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার বিভাগের চিকিৎসক পরিচয় বেরার কথায়, ‘১৪ মাস বয়সেও এই শারীরিক ত্রুটি কারও যদি থেকে যায়, তা হলে সাধারণত তার বেঁচে থাকার কথা নয়। এই শিশুর বিষয়টি অতি বিরল ঘটনা।’
এই চিকিৎসক জানান, শিশুটি কিছু খেতে পারছিল না। মারাত্মক রকমের বমি হচ্ছিল তার। এর সঙ্গে তার ছিল ডিহাইড্রেশন এবং প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা। চেস্ট এক্স-রে করে দেখা যায় এই শিশুর বিষয়টি অন্যরকম। চিকিৎসক পরিচয় বেরা বলেন, ‘ফুসফুস এবং পেটের মাঝে যে পর্দা থাকার কথা, এই শিশুর বাঁ দিকের ফুসফুস এবং পেটের মাঝে সেই পর্দাই ছিল না। এর ফলে খাদ্যনালী, প্লীহা, স্টমাক, এ সবের পুরোটাই এই শিশুর শরীরের উপরে দিকে চলে এসেছিল। এমনভাবে চলে এসেছিল যে তার বাঁ দিকের ফুসফুস দেখাই যাচ্ছিল না।’
চিকিৎসা পরিভাষায় এই বিষয়টিকে বলা হয় ডায়াফ্র্যামাটিক হার্নিয়া। চিকিৎসকরা বলেন, এটা অতি বিরল এবং প্রাণঘাতী এক জন্মগত ত্রুটি। সাধারণত তাড়াতাড়ি এই শারীরিক ত্রুটি ধরা পড়ে। তবে এই শিশুর ক্ষেত্রে অনেক দেরি করে ধরা পড়েছে। চিকিৎসক পরিচয় বেরা বলেন, ‘অপারেশনে এই শিশুর শারীরিক ত্রুটি দূর করা হয়েছে। তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। সে এখন ভালো আছে।’ মৃত্যুর মুখ থেকে তাঁদের সন্তানকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসকরা, স্বাভাবিকভাবেই এই শিশুর মা-বাবাও এখন যারপরনায় খুশি।