পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ সন্ত রামানুচার্যের বিশাল মূর্তি ‘স্ট্যাচু অফ ইক্যুয়ালিটি’ তৈরি করেছে চিন! এই খবর সামনে আসতেই এই তথ্য অস্বীকার করেছে বিজেপি। বিজেপির বক্তব্য, এই খবর অপ্রসাঙ্গিক। এই তথ্যের কোনও ভিত্তি নেই।
এদিকে সূত্রের খবর, যখন ভারতের পক্ষ থেকে চিনা দ্রব্য বর্জন করার ব্যাপারে জোরদারভাবে সরব হয়েছিল বিজেপি, সংঘ পরিবার ঠিক তখনই দেশের এই বিশাল প্রজেক্টের বরাত দেওয়া হয় চিনা সংস্থাকে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি বলেছে, এটি অপ্রসাঙ্গিক তথ্য। একইসুরে তেলেঙ্গানার দলনেতা এন ভি সুভাষ বলেছেন, ‘এই মূর্তি বসানোর আসল অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন। গোটা বিশ্বে ঐক্য, সাম্যের বার্তা দেবে সন্ত রামানুজের এই মূর্তি। হায়দরাবাদের উপকন্ঠে বসানো হয়েছে শ্রী রামানুচার্যের এই মূর্তি। তাঁরই ১০০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই মূর্তির উদ্বোধন করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই মূর্তিটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে হাজার কোটি টাকা।’
এন ভি সুভাষ আরও জানান, ১১ শতকে জন্মগ্রহণ করেন শ্রী রামানুচার্য। যিনি গোটা বিশ্বে সাম্য ও মানবতার বার্তা দিয়েছিলেন। এই বার্তাটাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এই মূর্তিটি কোথায় তৈরি করা হয়েছিল, চিন না আফ্রিকায় এটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে পড়ে না।
সূত্রের খবর, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মধ্যে কারা সবচেয়ে উঁচু মূর্তি তৈরি করে তাদের এই প্রকল্পের জন্য আহবান করা হয়। ভারতে একটি কোম্পানিও এই মূর্তি তৈরির দৌড়ে এগিয়ে ছিল। শেষমেশ বরাত পায় চাইনিজ কোম্পানি ‘এরোসান কর্পোরেশন’। তাদের সঙ্গে মূর্তি তৈরির প্রকল্পটির চুক্তি করা হয়। তৈরি করতে প্রায় ১৫ মাসের বেশি সময় লেগেছিল। মূর্তিটি প্রায় ১৬০০ ভাগে ভারতে আনা হয়েছিল। চিন থেকে ভারতে এটিকে বয়ে নিয়ে আসা হয়। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ৭০ কর্মী এখানে এসে মূর্তিটি জোড়া লাগান।
এই ঘটনায় হায়দরাবাদ আর্টস সোসাইটির সভাপতি, ললিতকলা অ্যাকাডেমি, নয়াদিল্লির পরিষদের সদস্য এম.ভি. রমনা রেড্ডি জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রকল্পগুলির জন্য চিনকে বরাত দেওয়া নতুন কিছু ঘটনা নয়। আমাদের এখানেও এই ধরনের মূর্তি হয়ে থাকে। সরকারের তরফ থেকে যারা এই ধরনের মূর্তিগুলি তৈরি করে থাকে, তাদের ট্র্যাক রের্কড দেখতে চাওয়া হয়। কিন্তু চিনা কোম্পানিগুলির ন্যূনতম মূল্য, সল্প শ্রমে এই ধরনের স্ট্যাচুগুলি তৈরি করে থাকে। তাই হয়তো দেশের জন্য এই ধরনের প্রকল্পের বরাত চিনা সংস্থাগুলি পেয়ে থাকে। স্থানীয় ভাস্কররা এই ধরনের প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পায় না। এমনকী বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্ট্যাচু গুজরাটে অবস্থিত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার বিশালাকার ‘ইউনিটি অফ গুজরাট’ মূর্তিতে যে ব্রোঞ্জ পাত বসানো হয়েছিল তাও চিনের একটি কারখানায় প্রস্তুত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকঢোল পিটিয়ে সন্ত রামানুচার্যের বিশাল মূর্তি ‘স্ট্যাচু অফ ইক্যুয়ালিটি’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২১৬ ফুটের উচ্চতার সন্ত রামানুজের তেলেঙ্গানায় হায়দরাবাদের নিকটস্থ সামশাবাদে ৪৫ একর জমিতে এই মূর্তি নির্মাণ করা হয়। সেখানে পদ্মের উপর হাতজোড় অবস্থান করছেন সন্ত রামানুজ। এই মূর্তিটি উচ্চতার নিরিখে দ্বিতীয় বলে জানিয়েছে জীয়র এডুকেশনাল ট্রাস্ট। উদ্বোধনকালে মোদি বলেন, ‘সন্ত রামানুজাচার্যের এই বিশাল মূর্তি গোটা বিশ্বে ঐক্যের বার্তা দেবে। এই মূর্তিটি তাঁর জ্ঞান, বিচ্ছিন্নতা এবং আদর্শের প্রতীক। এই বার্তার মধ্যে দিয়েই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’ মন্ত্রে দেশ তার নতুন ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করছে।” নরেন্দ্র মোদির এই স্লোগানের সুর বার বার কেটে দিচ্ছেন বিরোধীরা। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক প্রচার পেতে তারা এই কাজে উৎসাহী হয়েছেন। যে কারণে সম্প্রীতি বিদ্বেষকে ‘হিন্দুত্ব’ বলে চালানোর হিড়িক বেড়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে চিনের উহান থেকে আগত করোনা অতিমারি, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনা সেনাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের সংঘর্ষ থেকে শুরু করে ভারতীয় উৎপাদনকে উন্নত করার লক্ষ্যে চিনের সামগ্রী বয়কটের ডাক দিয়ে সুর চড়িয়েছিল কেন্দ্রের মোদি সরকার। ২০২০ সালেই ৫৯টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে কেন্দ্র সরকার। ২০২১ সালে বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া প্যাটেল জনসাধারণের কাছে চিনা পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান। এর পরেও চিনকে দিয়ে ভারতের এই বিশালাকার স্ট্যাচুগুলি তৈরি করে গোটা বিশ্বের কাছে মোদি সরকার কি বার্তা দিতে চাইছে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।