বিশেষ প্রতিবেদন: ৪ এপ্রিল ভার্জিনিয়ার রাজ্য সংসদ একটি আইন সংশোধন করার মাধ্যমে বিয়ের ন্যুনতম বয়সকে ১৮ করে দেয়। এর দু’দিন পর গভর্নর গ্লেন ইয়ঙ্গকিন এই পদক্ষেপকে আইনে পরিণত করেন। এই আইনকে শিশু অধিকারের ক্ষেত্রে একটি জয় হিসাবে দেখা হয়। আমেরিকায় অরক্ষিত শিশুদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে বাল্যবিবাহকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন। আমেরিকার সর্বশেষ (১২তম) অঙ্গরাজ্য হিসাবে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করেছে ভার্জিনিয়া। এর আগে ২০১৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে আরও ১১টি রাজ্য বাল্যবিবাহ বন্ধে আইন পাস করেছে। এর অর্থ হল, ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশেষ কিছু শর্তের আওতায় আমেরিকার প্রায় সর্বত্রই বাল্যবিবাহ বৈধ ছিল। শর্ত ছিল, এ ধরনের বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবক ও বিচারকের মত থাকতে হবে, অথবা নাবালক যদি গর্ভবতী হয়ে যায় বা তার সন্তানের জন্ম হয় সেক্ষেত্রেও বাল্যবিবাহ বৈধ ছিল। বিবাহ আইনে এসকল ফাঁকফোঁকরের কারণেই দেশের প্রায় সব জায়গা বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল। তবে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মাত্র ১২টি রাজ্যে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করার আইন লজ্জাজনক ভাবে অত্যন্ত কম। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও কিছু করতে হবে। দেশব্যাপী বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বাল্যবিবাহকে আমেরিকা বিদেশি সমস্যা হিসাবে দেখলেও আমেরিকাতেই এই সমস্যা সবচেয়ে তীব্র। জানা যায়, ২০০০ থেকে ২০১৮ সালে মধ্যে আমেরিকায় ৩ লক্ষেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ককে আইনি উপায়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরপ, ক্যালিফোর্নিয়ায় বিয়ের কোনও ন্যুনতম বয়স নেই। অঙ্গরাজ্যটিতে প্রতিবছর ৮ হাজার শিশুর বিয়ে হয়। চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান হল, আমেরিকায় বাল্যবিবাহের মধ্যে ৮৬ শতাংশই প্রাপ্তবয়স্ক ও নাবালকের মধ্যে হয়ে থাকে। কন্যার বয়স বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। নাবালকদের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের এই বিয়ের ফলে যৌন নির্যাতন ও গার্হস্থ্য সহিংসতার ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, বাল্যবিবাহ এক ধরনের লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি, এটি অপ্রাপ্তবয়স্কদের দারিদ্র্য ও শোষণের উচ্চ ঝুঁকিতে রাখে এবং তাদের শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। বাল্যবিবাহের কারণেই বিশ্বব্যাপী মেয়েরা স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে নেয়। আর আমেরিকায় যেসকল মেয়ে ১৯ বছরের আগে বিয়ে করে তারা অনেক আগেই হাইস্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার সম্ভাবনা তাদের ৪ গুণ কম ও তাদের দারিদ্রে বসবাস করার সম্ভাবনা ৩১ শতাংশ বেশি।
বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে এমন কোনও ফেডারেল আইন না থাকায় এবং রাজ্যের বাল্যবিবাহ আইনে অসঙ্গতি ও ফাঁকফোকর থাকায় এই অনুশীলন আজও একইভাবে চলছে আমেরিকায়। আমেরিকাকে ব্যতিক্রমী হিসাবে তুলে ধরার প্রয়াস ও বাল্যবিবাহকে বিদেশের সমস্যা হিসাবে দেখানোর চেষ্টার কারণেই দেশটিতে গঠনমূলক আলোচনা ও কার্যকর আইন প্রনয়ণ হচ্ছে না। বিভ্রান্তিকর বিশ্বাস এবং নিষ্ক্রিয়তার জন্যই রাষ্ট্রগুলি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। পাশাপাশি রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল দলগুলির তরফেও বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ কম। রক্ষণশীলদের মতে, ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধা দিতে পারে বাল্যবিবাহ। প্রগতিশীল দলগুলির দাবি, বাল্যবিবাহ নাবলকদের থেকে যৌনতা সম্পর্কিত পছন্দ ছিনিয়ে নিতে পারে। বাল্যবিবাহ একজন নাবালকের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সন্তান জন্মদানের স্বাধীনতার জন্য হুমকি। পুরানো ঐতিহ্য ও রীতি সংরক্ষণের চেয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করাই আমেরিকান শিশুদের স্বাস্থ্য ও মর্যাদার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিবাহ সংক্রান্ত আইনি চুক্তিতে সই করার আগে নাবালকদের সুরক্ষার প্রয়োজন যেখান থেকে তারা আর বেরিয়ে আসার ক্ষমতা রাখে না। বিশ্বের অন্য দেশগুলিতে বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিবাহ নিয়ে আমেরিকা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করলেও, আমেরিকার অভ্যন্তরে এ বিষয়ক আইন অত্যন্ত দুর্বল যা ঝুঁকিতে থাকা নাবলকদের রক্ষায় ব্যর্থ। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকার বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যই আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার মাণদণ্ড মেনে চলে না। আমেরিকায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য প্রথমে এটিকে একটি জরুরি, চলমান ও ঘরোয়া সমস্যা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। অনুশীলনটিকে চালিয়ে গেলে বা প্রভাবিত সম্প্রদায়গুলিকে বহিষ্কার করা হলে তা কোনও কাজে আসবে না। মার্কিন নীতিনির্ধারকদের বাল্যবিবাহের মূল কারণ খুঁজতে হবে এবং এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে হবে। দেশের প্রতিটি রাজ্যকেই বিবাহের ন্যুনতম বয়স নির্ধারণ করে একটি শক্ত আইনগত কাঠামো তৈরি করতে হবে। নীতিনির্ধারক, উকিল ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাল্যবিবাহ এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক লিঙ্গ-ভিত্তিক অনুশীলনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মর্যাদার মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত রাখতে হবে।