পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ধৃত ধর্মগুরুকে গ্রেফতারের কয়েকঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। বৃহস্পতিবার রাতে কর্নাটকের মুরুগা মঠের প্রধান ধর্মগুরু শিবমূর্তি মুরুগা শারনারুকে গ্রেফতার করা হয়। ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে তপশিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনের অধীনেও মামলা করা হয়েছিল। শুক্রবার স্থানীয় আদালত ধর্মগুরুকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে নির্দেশ দেয়। জেলে কিছু স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরির কারণে শুক্রবার তাকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ধর্মগুরু শিবমূর্তি মুরুগা শারনারু পকসো মামলায় গ্রেফতার করা হয়। কয়েক ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। জেলে পাঠানোর কিছুক্ষণ পরেই ধর্মগুরুর স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়। তার পরেই তার শারীরিক পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইসিজি পরীক্ষায় হার্টে জটিলতা পাওয়া গিয়েছে। দুদিন ধরে তিনি ওষুধ খাননি বলে খবর। বিগত ১০ বছর ধরে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপে ভুগছেন তিনি। তাকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে বেঙ্গালুরুতে স্থানান্তর করা হবে। চিত্রদুর্গার জেলা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ বাসভরাজু বলেছেন, ধর্মগুরুকে অতিরিক্ত চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুর জয়দেব ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাসকুলার সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে।
উল্লেখ্য, বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শুক্রবার ধর্ষণে অভিযুক্ত লিঙ্গায়ত ধর্মগুরু ডঃ শিবমূর্তি মুরুগা শরনারুর বিরুদ্ধে সম্পত্তি অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে মঠে সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ তুলে মামলা করেন এক ব্যক্তি। এছাড়াও একাধিক বেনামে সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে তা বিক্রির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারীর বক্তব্য, ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে টিপ্পা সেট্টি মঠের ৪ কোটি টাকার সম্পত্তি ৪৯ লক্ষ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বেঙ্গালুরুর কেনগেরির কাছে সুলিকেরে অবস্থিত ৭.১৮ একর সম্পত্তি বেআইনিভাবে বিক্রি করারও অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও ২০১৩ সালে ধর্মগুরুর সমন জারি হয়। সেই সময় তিনি বার বার সেই হাজিরা এড়িয়ে যান।
শিবমূর্তি মুরুগা শারনারু’র বিরুদ্ধে হাইস্কুলের মেয়েদের ওপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার মাইসুরু সিটি পুলিশ পকসো ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। মোট পাঁচজন প্রধান ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটের এক অফিসার ও মঠের হোস্টেলের ওয়ার্ডেন। এই ঘটনায় ওয়ার্ডেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নির্যাতিতারা এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে তাদের ওপর চলা অত্যাচারের কথা জানায়। তারা পুলিশের কাছে ঘটনাটি জানায়। মামলাটি পরে ঘটনাস্থল চিত্রদুর্গে স্থানান্তরিত করা হয়।
ধর্মগুরুর গ্রেফতারি ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্তের দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে স্থানীয় মানুষ। কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয়েছে চিত্রদুর্গাকে।
উল্লেখ্য, শিবমূর্তি মুরুগা সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগের পর মহীশূর পুলিশ শিশু যৌন অপরাধ সুরক্ষা (পকসো) আইনের অধীনে তাদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করে। নির্যাতিতারা বেসরকারি সামাজিক সংস্থা ওডনদী সেবা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্ত ঘটনা জানায়। এরপর ওই সংস্থা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সূত্রের মতে, মাইসুরু পুলিশ প্রাথমিকভাবে তদন্ত সম্পন্ন করে। পরে মামলাটি মামলাটি ঘটনাস্থল চিত্রদুর্গের বিচার বিভাগীয় থানায় স্থানান্তর করা হয়।