পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক:‘হিজাব’ বা ‘বোরকা’ কখনও নারীর অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে না। সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে সেটাই প্রমাণ করল চেন্নাইয়ের ভিহারী ফাতিমা। করোনা আবহ, লকডাউন, বিভিন্ন কারণে নানাভাবে প্রবল সমস্যায় পড়েছিলেন আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষজন। কাজ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। ব্যতিক্রম নয় ফাতিমার স্বামীও। সংসার চালাতে তাই বাধ্য হয়ে সংগ্রামে নামতে হয়েছিল ফাতিমাকে।
নিম্ন মধ্যবিত্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম ফাতিমার। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার ছিল। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনের জেরে কাজ হারায় তাঁর স্বামী। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দম্পতি। তার পরেই অটো চালানোর মতো সাহসিক সিদ্ধান্ত নেন ফাতিমা। শুধু অভাবের তাড়নায় নয়, স্বামী ও সংসারের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেন ফাতিমা।
কিন্তু কখনও ভাবেননি, লকডাউনের ফলে তাঁর জীবনের মোড় এভাবে ঘুরে যাবে। যে তাঁকে সংসারের হাল ধরতে অটোচালক হিসেবে কাজে নামতে হবে শহরের পথে। সম্প্রতি ফাতিমার লড়াইয়ের কথা প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। তার পরেই তাঁকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
প্রসঙ্গক্রমে ফাতিমা জানান, চালকের আসনে বসে আছেন একজন মহিলা। তাও আবার অটো ও বাসের মতো যানে। সাধারণত এমন দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত নন সাধারণ মানুষজন। মহিলা চালক দেখে ক্ষণিকের জন্য থমকে যান নিত্যযাত্রীরা। আবার অনেক যাত্রী কোনও রাখঢাক না করেই বলে বসেন, মহিলা চালক আবার বোরকা পরে। এই প্রথম এমন দৃশ্য দেখলেন তিনি। আবার অনেকে বলেন, আমি বুঝতেই পারিনি আপনি একজন মহিলা চালক।
নিজের আয়ের কথা উঠলে ফাতিমা জানান, স্বামী ও তাঁর উপার্জিত অর্থে তাঁরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা ও পরিবেশ দিতে সক্ষম হবে। এদিন তিনি আরও বলেন, শহরে অনেক মহিলা যাত্রী আছে, যারা মহিলা চালক পেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। নিরাপদ বোধ করে। সেক্ষেত্রে অনেকেই আমার অটোতে ওঠেন। এমনকি মহিলা যাত্রীরা তাদের জীবনের নানান সুখ-দুঃখের কথাও আমার সঙ্গে ভাগ করে নেন। পর্দা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি জানান, সাধারণত চালকরা খাকি ও পাঞ্জাবি পরেন। কিন্তু ওই পোশাক না পরতে পারায় আমার খারাপ লাগে। তবে বোরকা আমাকে গর্বিত করে। নিজের প্রতি সম্মান বাড়ে। বোরকা পরে যখন আমি অটো চালায় মনে হয়, ধর্মীয় পোশাক কখনও জীবনে উন্নতির পথে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আমাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
আমি সমাজের এক শ্রেণী মানুষের উদ্দেশ্যে এটাই বলব যে, বোরকা বা হিজাব পরিহিতা মহিলারা অসহায়, ধর্মান্ধ হয় না। তারা হিজাব পরিধান করেই সমাজে পুরুষদের মতো সংগ্রাম করে, গায়ের ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করতে পারে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীদের সাফল্যের কাহিনি চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। কিন্তু কোথাও না কোথাও চাপা পড়ে যায় ফাতিমার মতো মহিলাদের জীবন সংগ্রাম কাহিনি। সমাজের তথাকথিত সাফল্য অর্জন না করলেও যে ভাবে পুরুষশাসিত একটি পেশায় দাপিয়ে রাজত্ব করছেন ফাতিমা, তা দেশের মহিলাদের কাছে উদাহরণ স্বরূপ। পুরুষদের থেকে মেয়েরাও যে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই, তা তাঁর রোজকার জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করছেন ফাতিমা।