পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: জাতীয় প্রতীকের পর দেশের জাতীয় সংগীত ও জাতীয় গান নিয়ে এবার বিতর্ক শুরু হয়েছে। কয়েক মাস আগে জাতীয় প্রতীক ‘অশোক স্তম্ভ’-এর সিংহের হিংস্র মূর্তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল দেশে। নয়া সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বোধন করা ওই স্তম্ভের সঙ্গে আগের ‘অশোক স্তম্ভ’-এর মিল নেই বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
এবার বিতর্কটি হিংস্রতা বিষয়ক না হলেও এর সঙ্গে অনেকে জাতীয়তাবাদকে জুড়ে দিয়ে জলঘোলা করতে চাইছেন। ‘জনগণমন’ ও ‘বন্দে মাতরম’-এর মধ্যে কার সম্মান বেশি, তা নিয়ে মামলা হয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টে।
সংঘ-ঘনিষ্ঠ আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায় এই মামলাটি করেছিলেন। তার ধারণা, দেশের কেউ কেউ ‘বন্দে মাতরম’কে যথাযথ সম্মান দিচ্ছে না। তাই তিনি সমমর্যাদা আদায় করতে ‘জনস্বার্থে’ মামলাটি করেন। দিল্লি হাইকোর্ট এ ব্যাপারে কেন্দ্রের জবাব চেয়েছিল।
অমিত শাহের অধীনস্থ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি হলফনামা জমা দিয়ে জানিয়েছে, দু’টি সংগীতেরই সমমর্যাদা রয়েছে। দু’টি সংগীতের প্রতি জনগণকে সমান শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। কেন্দ্রের এই হলফনামা বিশেষজ্ঞদের আশ্চর্য করেছে। কেন-না ‘জনগণমন’-এর যে সম্মান ও মর্যাদা দেশে রয়েছে তা কখনোই ‘বন্দেমাতরম’কে দিতে বলা হয়নি।
এটা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও রয়েছে। তাছাড়া ‘জনগণমন’ গাওয়ার সময় দাঁড়ানো-সহ বেশকিছু বিধি রয়েছে যা ‘বন্দে মাতরম’-এর ক্ষেত্রে নেই। তাহলে দু’টি গানই সমমর্যাদার হয় কী করে? এ ছাড়া ‘বন্দে মাতরম’ লেখার প্রেক্ষাপট নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। সংবিধানে এর কোনও উল্লেখ নেই। তবে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতকে সম্মান জানানো যে জনগণের মৌলিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, তা স্পষ্ট লেখা রয়েছে সংবিধানের ৫১এ ধারায়। জাতীয় গানের ব্যাপারে কিছু বলা নেই। এখন হঠাৎ করে ‘বন্দে মাতরম’কে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে কোনও মহল কি ফায়দা লুটতে চাইছে, উঠছে প্রশ্ন।
দেশের জাতীয় সংগীত বা নাশ্যনাল অ্যানথেম নোবেলজয়ী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। ১৯১১ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের একটি অধিবেশনে এটি প্রথম গাওয়া হয়েছিল।
১৯৫০ সালে একে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেওয়া হয়। অপরদিকে ‘বন্দে মাতরম’ হল জাতীয় গান বা ন্যাশনাল সং। এটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস থেকে নেওয়া।
এই উপন্যাসের ছত্রে ছত্রে মুসলিম বিরোধিতা রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। শুধু তাই নয়, এই উপন্যাসে মুসলিমদের বহিরাগত বলে দেগে দিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র। তাদেরকে দেশছাড়া করতে যে মন্ত্রের কথা লিখেছেন তিনি, তাই-ই ‘বন্দে মাতরম’।
১৮৯৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের একটি অধিবেশনে এটি গাওয়া হয়েছিল। এটিও ১৯৫০ সালে জাতীয় গানের মর্যাদা পায়। তবে দেশে সাধারণতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় সব জায়গায়।