মাড়গ্রাম, ২৬ মে: বীরভূমের মাড়গ্রামের মোল্লা পাড়ায় দুশ্চিন্তার পাহাড়। ক’দিন ধরে গোটা গোটা রাত পরিবারের কেউ ঘুমুতে পারেনি। শুক্রবার মাড়গ্রাম থানা মারফৎ তারা জানতে পারেন বিদেশে কর্মরত তাদের ছেলে আর নেই! এদিকে দুদিন আগে বিশাখাপত্তনম পুলিশ কম্বোডিয়া থেকে পরিচালিত একটি মানব পাচারের র্যাকেট উন্মোচনের কয়েকদিন পর, ৬০ জন ভারতীয় যুবকের একটি দল দিল্লিতে পৌঁছেছে। সেই খবর পরিবার সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে অকুল পাথারে। তারা জানে না তাদের ছেলে কিভাবে মারা গেল। মারা গেলে সেই লাশের মুখ দেখতে পাবে কিনা। কেন্দ্র সরকারের কাছে তাদের যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। তবে রাজ্য সরকার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে, বলে পরিবার সূত্রে খবর।
জানা গেছে, কম্পিউটারে ডিপ্লোমা করেন আব্দুল হামিম ওরফে বেন্টিং। তার আগে রামপুরহাট কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক হন তিনি। চাচাতো ভাই মিঠু মোল্লা বলেন, পরিবারের ছোট ছেলে বছর উনচল্লিশের আব্দুল হামিম মাস তিনেক নয়ডার এক এজেন্টের মাধ্যমে অনলাইনে যোগাযোগ করে কম্বোডিয়া কাজে যান। সেখানে তিনি পঁচিশে মে মারা যান। মৃত্যুর কারণ অনিশ্চয়তা নিয়ে ভয়ংকর দিন কাটছে পরিবারের। মৃত আব্দুল হামিমের একমাত্র ছোট ছেলে মহম্মদ কাইফ সিউড়ীর এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার পড়ার কী হবে সে জানে না। মায়ের কোলে তার প্রশ্ন, আব্বু কবে আসবে? মৃতের মা ফিরোজা বেগম অসুস্থ। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। বাবা নাম আব্দুল লতিফ অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী। বাড়ির অবস্থা ভালো নয়। ছোট ছেলে আব্দুল হামিমকে বিদেশে পাঠাতে শেষ সম্বল টুকু খরচ হয়েছে। মৃত হামিমের স্ত্রী মেরিনা পারভীন জানান, কুড়ি মে তার স্বামীর সাথে কথা হয়েছে। বারো ঘন্টা ডিউটি করতেন। ব্যস্ত থাকতেন। নিজেই দু’দিন অন্তর ফোন করতেন। কুড়ি তারিখ ফোন করে জানান, ভালো আছেন। তারপর ফোন না আসায় আমরা ফোন করে উত্তর না পাওয়ায় এজেন্টকে ফোন করি। তিনিও ফোন ধরেন নি। তাই দুশ্চিন্তায় আমরা রাত কাটিয়েছি। তারপর পঁচিশ তারিখ মাড়গ্রাম থানা থেকে মৃত্যুর খবর পাই। আমার স্বামীর হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু হাতে ডেথ সার্টিফিকেট না পেলে কী করে বুঝবো হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু। আমাদের সন্দেহ হয়তো তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। লাশ আনতে ছয় থেকে সাত লক্ষ টাকা চাইছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা তো তিন মাসের কোনো টাকা দেয় নি। কারণ আমার স্বামী ঘরে কোনো টাকা পাঠান নি। আমরা চাই সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াক। বাবা আব্দুল লতিফ বলেন, মা আর স্ত্রীর সাথে বেশি কথা হতো। আমি বলতাম কোনো অসুবিধা বুঝলে দেশে পালিয়ে আসবি। সেটা আর হোলো না। কিভাবে মৃত্যু ধন্দে বড়ো ভাই আব্দুল হাফিজ এবং চাচাতো ভাই মিঠু মোল্লাও। রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিককল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম জানান, তিনি পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করেছেন। শুধু তাই নয়। তাঁর নথি এমব্যাসিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
বোলপুর সাংসদ তথা মাড়গ্রামের বাসিন্দা অসিত মাল বলেন, যদিও পরিবারের সাথে আমার তখন কথা হয় নি। ফেসবুকে দেখতে পাই আমাদের স্থানীয় ছেলের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। খুব মন খারাপ হয়ে যায়। তারপর আমাদের রাজ্যসভার এমপি এবং উনিও ওখানকার ছেলে, পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিককল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের সাথে কথা বলি। উনি পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। তিনি পরিবারের সাথে কথা বলেন। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিক রবিউল ইসলামের সাথে কথা বলে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এক কথায় যথাযথ ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করেছেন। দেশে লাশ ফেরানোর প্রসেসিং শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ্যামবেসী মারফত এই মৃত্যুর খবর পেয়ে সমস্ত রকম প্রাথমিক সাহায্য করা হয়েছে।