পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: যে বাড়িতে জন্মেছেন, যৌবনে সংসার পেতেছেন আজ সেই বাড়ির বাইরে কাগজপত্র হাতে বসে আছেন আতিক শাহ। ‘তাঁর বাড়ি যে তাঁরই’, সেকথা প্রমাণ করতে সার্টিফিকেট অফ সেল হাতে নিয়ে বসে আছেন আতিক। এমন উদ্বেগ শুধু আতিক শাহ্’র উঠোনে নয়, হলদোয়ানির গফুর বস্তি, ইন্দিরা নগর, ঢোলক বস্তির ৪ হাজার পরিবারের উঠোনে ধরা পড়ছে ওই একই ছবি। সবাই বাক্স ঘেঁটে খুঁজে বের করেছেন, তাঁদের বাবা-ঠাকুর্দার কেনা জমির প্রমাণপত্র।
রেলের দাবি, হলদোয়ানির রেললাইনের ধারে গড়ে ওঠা এই সব বস্তির জমির মালিকানা তাদের। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রেলের জমিতে সরকারি প্রকল্পের সাহায্য পেয়ে কিভাবে বাড়ি তৈরি করল বাসিন্দারা। তাছাড়া, জমি যদি রেলের হয়, তবে সেই জমি দখল করে গড়ে ওঠা বাড়ির ট্যাক্স বা বিদ্যুত-জলের বিল কিভাবে সরকারের কোষাগারে জমা করলেন সেখানকার বাসিন্দারা?
উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের উচ্ছেদ রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পরবর্তী শুনানি হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রশাসন তাদেরকে আপাতত উচ্ছেদ করেনি বলে মিষ্টি বিলি করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। কিন্তু তারপরও ৭ ফেব্রুয়ারির কথা ভেবে এখনও চোখে ঘুম নেই আতিক শাহ্’র মত আরও অনেকের। আতিক শাহ’র বাবা সাদিক শাহ্ ১৯৬০ সালের ২৮ নভেম্বর ৩ হাজার ৬০০ টাকার বিনিময়ে ভারত সরকারের পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। প্রমাণপত্র হিসেবে তাঁকে সার্টিফিকেট অফ সেল দেওয়া হয়েছিল। এমন কাগজ ওই তিনটি বস্তির বেশিরভাগ বাসিন্দার কাছেই আছে। তবুও রেল নিজের দাবিতে অনড়।
বাসিন্দাদের মতে, দেশভাগের সময় হলদোয়ানির বলভুলপুরা এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা ভাগ্য অন্বেষণে তাদের জমি-বাড়ি ছেড়ে পাকিস্তানে পাড়ি দেয়। সেই সব পরিত্যক্ত সম্পত্তিকে সরকার ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং তার মালিকানা চলে যায় সরকারের হাতে। এই জমিই পরবর্তীকালে হলদোয়ানির বাসিন্দারা ভারত সরকারের পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কেনে। তাদের অভিযোগ, এই জমিতে গড়ে ওঠা বাড়ির ট্যাক্স, জল ও বিদ্যুতের বিল নেয় উত্তরাখণ্ড সরকার। তাহলে এই জমি কিভাবে অবৈধ হতে পারে? ওই জমিতেই গড়ে উঠেছে, ৩ টি সরকারি স্কুল, ১ টি সরকারি হাসপাতাল। জল, নর্দমার ব্যবস্থাও করেছিল রাজ্য সরকার। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, অবৈধ জমিতে কিভাবে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেল তারা?
উৎখাত স্থগিতাদেশের পরও বস্তির বাইরে এখনও দাঁড়িয়ে আছে বুলডোজার। নিলামের কাগজ হাতে নিয়ে বুলডোজারের ভয়ে এভাবেই উদ্বেগের প্রহর গুনছেন হলদোয়ানিবাসী।